প্রকাশিত: ১২:২৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৫
সারাদিন ডেস্ক
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার আগামী মে মাসের শুরুতেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
আল জাজিরার ‘টক টু আল-জাজিরা’ অনুষ্ঠানে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মে মাসের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তবে এখনো ভারতের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া পাওয়া যায়নি।
নির্বাচন আয়োজন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন-পূর্ব সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হলে আগামী ডিসেম্বরেই ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে যদি সংস্কারের তালিকা দীর্ঘ হয়, তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, কেবল মানবিক সহায়তা নয়, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান হচ্ছে তাদের নিজ দেশে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আংশিকভাবে আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করছে। দলটি এখনো জানায়নি তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত এবং প্রচলিত আইনের আলোকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।
সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রসঙ্গও উঠে আসে। ড. ইউনূস জানান, থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক হয়, যেখানে তিনি শেখ হাসিনাকে উসকানিমূলক মন্তব্য থেকে বিরত রাখার অনুরোধ জানান। তবে মোদি জবাবে বলেন, তিনি শেখ হাসিনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে উপস্থাপক জানতে চান, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কমে এসেছে কি না। উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে এই সরকারই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান দিতে পারবে। তারা এখনো আমাদের সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেনি, বরং একটি ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে।’
চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এখন আর কোনো নির্দিষ্ট বলয়ের রাজনীতি করে না। বরং, সবার সঙ্গে সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চায়।