প্রকাশিত: ৪:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত কয়েক দশক ধরে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এসব অনিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘প্রথম বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা সম্মেলন ২০২৪’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সম্মেলনটি দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত, যেখানে ‘উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করা হয়।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম, তখন শিক্ষক নিয়োগে নিয়ম-কানুন মেনে চলা হতো। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম শুরু হয়েছে। শুধু দলীয়করণ নয়, দুর্বৃত্তায়নও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো অনেক শিক্ষক আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানের গবেষক। তাদের গবেষণার সংখ্যা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়, কিন্তু এসব মেধাবী শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনায় তেমন গুরুত্ব পান না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক আলোচনা বেশি হয়, মেধাবী শিক্ষকরা আড়ালে পড়ে থাকেন।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের পার্থক্য রয়েছে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান, তারা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, যা আগে দেখা যেত না।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা শেষ করেও অনেক শিক্ষার্থী কর্মহীন থেকে যাচ্ছেন। উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে, এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ নেই।’
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরাজনীতির উদাহরণ হিসেবে জামাল নজরুল ইসলামের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “কেমব্রিজ ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা জামাল নজরুল ইসলামকে আমরা কী যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পেরেছি?’
তিনি শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাজেট বাড়ানো হঠাৎ সম্ভব নয়, তবে শিক্ষা খাতে উন্নতি করতে হলে এটি জরুরি।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ উপাচার্যদের গবেষণার সাইটেশন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজারের মধ্যে থাকে। এমন একজন ব্যক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পায় কীভাবে?’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কেও তিনি বলেন, ‘গ্রামে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কলেজগুলোতে শিক্ষক নেই, শিক্ষক নিয়োগ রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছে এবং এতে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’