প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২৪
সারাদিন ডেস্ক
ভক্তদের কাছে তিনি গুরু। অনেকের কাছে তিনি নগর বাউল। তার ভারী কণ্ঠে মাতোয়ারা সব বয়সের সংগীতপ্রেমীরা। তার কনসার্ট মানে আলাদা এক উদ্দীপনা, প্রাণোচ্ছ্বলতা। কথা ও সুরের এক অনন্য মিশেল। বাংলা রক মিউজিকে তার আগমন আলোর ঝলকানির মতো। ‘ফিলিংস’ হয়ে ‘নগর বাউল’, যে গালিচায় উড়ে বেড়িয়েছেন, ছড়িয়েছেন দোর্দণ্ড প্রতাপ। তার অসংখ্য গানে উন্মত্ত হয়ে হাওয়ায় ভেসেছে লাখো লাখো শ্রোতা।
সুবাস ছড়িয়েছেন কখনও মহুয়া ফুলের মতো, কখনও বা মঞ্চে ধরা দিয়েছেন বিদ্যুচ্চমকের মতো। তার গাওয়া ‘বিজলি’ গানের মতো করে বলি– চোখের দেখাই যদি মনে রয়, ভালোবেসে আমরা তাকে কী বলব? আমরা তাকে বলব, ‘বাংলার রকস্টার’। অনেকের মতে, বাংলা গানের সত্যিকারের সুপারস্টার তিনি। তার নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস।
আজ এই গুণী মানুষটির জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর জেমসের জন্ম হয়েছিল নওগাঁয়। তবে বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। ২০১৫ সালে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ১০টি বিলবোর্ড টাঙিয়ে প্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের ছেলে প্রিন্স।
জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জেমসের জন্মদিনে ভিন্ন কিছুর আয়োজন করেন ওই ভক্ত। ২০১৪ সালেও তিনি জেমসের জন্মদিনে বিশাল এক কেক নিয়ে ঘুরে বেড়ান ঢাকা শহরের নানা জায়গায়।
সেই আশির দশক থেকে শুরু জেমসের পথচলা। তখনকার আর বর্তমান শহরের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। গান শোনার মাধ্যমও বদলে গেছে। ক্যাসেট থেকে সিডি, সিডি থেকে এমপি থ্রি। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও ডিজিটাল বাংলাদেশের নতুন যুগে ঢাকার একেকজন তরুণ যেন বিশ্বনাগরিক। বলিউড, হলিউড, আরজিৎ সিং, মেরুন ফাইভ, লিম্প বিজকিট, নেটফ্লিক্স— বিশ্বের সব সাংস্কৃতিক পণ্য এখন মুঠোফোন, এমপি থ্রি প্লেয়ার অথবা ল্যাপটপে, ক্লিকের নাগালে। কিন্তু গানের গুরু বদলাননি। তিনি একজনই—জেমস।
১৯৮০ সালে জেমস প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। ১৯৮৭ সালে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ পায়। ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের একক অ্যালবাম প্রকাশ করে সুপারহিট হয়ে যান জেমস। এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ সালে ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো প্রকাশ পায়। এরপর ‘ফিলিংস’ ভেঙে জেমস গড়ে তোলেন নতুন লাইনআপে ব্যান্ড ‘নগর বাউল’।
২০০০ সালের প্রথম দিকে পেপসির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশগ্রহণ করেন জেমস। এটিই ছিল তার কাজ করা প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্র। বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রচার করা হয়। এরপর তিনি ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন।
চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেও সফল হয়েছেন নগর বাউল। তার বেশকিছু গান ‘সত্তা’, ‘দেশা দ্য লিডার’ ছবির জন্য গান করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। বাংলা গানের পাশাপাশি হিন্দি গানে কণ্ঠ দিয়েও জয় করেছেন কোটি ভক্ত-শ্রোতার হৃদয়।
বলিউডে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ (গ্যাংস্টার সিনেমা), ‘চাল চালে’ (ও লামহে) এবং ‘আলবিদা’, ‘রিস্তে’ (লাইফ ইন অ্যা মেট্টো), ‘বেবাসি’ (ওয়ার্নিং) গানগুলো উল্লেখযোগ্য। একটা প্রজন্মের কাছে জেমস মানে এখনো এক উন্মাদনা, তার প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা এতোটাই প্রবল যে ভক্তদের তিনি ‘দুষ্টু ছেলের দল’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেন। তার প্রকাশ পাওয়া সবশেষ গান ‘সবই ভুল’। ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের চাঁদ রাতে এটি প্রকাশ পায়।