প্রকাশিত: ৫:০৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২৪
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, শুধুমাত্র সনদমুখী বা উচ্চশিক্ষামুখী, ঢাকা কিংবা বিদেশমুখী না হয়ে দক্ষতানির্ভর ও কর্মমুখী মানবসম্পদ হিসেবে দেশের তরুণ প্রজন্মকে তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এই ইন্টেলিজেন্স যুগে প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বের আসনে আসীন করতে হলে দক্ষতা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হলেই হবে না; শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে একটা নলেজ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে এবং আমাদের মনস্তাত্ত্বিক একটা পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘দীক্ষা-দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা অনলাইনে’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ২০টি কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
“একটাই লক্ষ্য, হতে হবে দক্ষ” উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও প্রযুক্তির নিত্য নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে হয়তো প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্ধিতার বাজারে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যেতে পারি। সেই আশংকা ও প্রয়োজনীয়তা থেকে গবেষক, উদ্ভাবক ও দার্শনিকরা চিন্তা করছেন কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগামীর প্রযুক্তি দক্ষতায় দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা যায়। তিনি বলেন, দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে একটা ব্লেন্ডেড নলেজ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্পের সফল বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সেজন্য আমাদের প্রথাগত শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকদের রোল’টা শুধু শিক্ষকতা না হয়ে মেন্টরিং হতে হবে। কোন শিক্ষার্থী কারিকুলামের বাইরে কিছু শিখতে চাইলে তাকে সঠিক প্ল্যাটফর্ম দেখিয়ে দিতে হবে। দীক্ষা ও মুক্তপাঠের মতো এমন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে, আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে যুক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো: সামসুল আরেফিন সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: মশিউর রহমান, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আতাউর রহমান খান, এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ মামুনুর রশীদ ভূঞা, দীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ কবীর হোসেন।
পরে প্রতিমন্ত্রী ‘দীক্ষা-দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা অনলাইনে’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ২০টি কোর্সের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠান শেষে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, একটি গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটাকে ব্যবহার করে গুজব, মিথ্যা ও অপপ্রচার করাটাকে একটা অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়েছে। শুধু দেশের ভেতরে না দেশের বাইরে থেকে কিছু কনটেন্ট বুস্ট করা হচ্ছে। একদিকে যে রকম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে চেষ্টা করছে, আমরা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাইবার প্লাটফর্মে আমরা চেষ্টা করছি। দেশের নাগরিকদের এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থের যে জায়গায় যে ধরনের ভূমিকা নেওয়া উচিত বা প্রয়োজন সেটাই আমরা চেষ্টা করছি।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহল অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। পরিবেশ পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার স্বার্থে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি এবং যত দ্রুত পরিবেশটা নিয়ন্ত্রণে আসবে আইনশৃঙ্খলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং আমরা এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারব।
তিনি বলেন ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টিকটকের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু বিতর্কিত কনটেন্ট অপসারণ নিয়ে তাদের প্রাইভেসি পলিসি সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি প্রাণের মূল্য আছে, এই প্রাণ ঝরে যাক তা আমরা চাই না। এ ধরনের ক্ষতি আগামী দিনে যদি এদের কারণে হতে থাকে আমরা এটা কখনো ছাড় দেবো না। তাদের বাংলাদেশে ডেটা সেন্টার স্থাপন করে বাংলাদেশের আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রতিমন্ত্রী অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা দুটোই এখন আমাদের সমানভাবে বিবেচনা নিতে হচ্ছে। এই কারণে সাংবাদিক বন্ধুগণ, গণমাধ্যম ও সকল নাগরিকের কাছে আমরা সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি বিনয়ের সাথে সবাইকে ধৈর্য্য ধরে এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।