প্রকাশিত: ৮:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২৪
সারাদিন ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ মোড় থেকে সরে গেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা অবরোধের পর এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, আজ আমাদের কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। আমরা আগামীকাল শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করবো এবং এই কর্মসূচি সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এরপর শনিবার বিকেল ৩টায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। রোববার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে। তবে শনিবার বিক্ষোভ মিছিলের পর পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের যুদ্ধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, কুলীনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। চাষার ছেলে চাষা থেকে যাবে, মজুরের ছেলে মজুর থেকে যাবে, রাজমিস্ত্রির ছেলে রাজমিস্ত্রি থেকে যাবে, তাদের সারাজীবন শোষণ করবে ধনী শ্রেণি! এজন্য একাত্তর (১৯৭১) সাল থেকেই তারা আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করে আসছে। আমাদের যারা পূর্বপুরু তারা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়।
শাহবাগ অবরোধের কর্মসূচি শেষ করে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে যান। এর আগে এদিন বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শাহবাগে যান এবং শাহবাগ মোড় ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামছেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি জানাচ্ছেন। এগুলো হলো, পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগের পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।