প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৪
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
নিজস্ব টুলসেটের ওপর জাতীয়ভাবে তৈরি এআই-ভিত্তিক জিপিটি প্লাটফর্ম জি-ব্রেইন উদ্বোধন করেছে সরকার। চ্যাট জিপিটির আদলে তৈরি করা এ প্ল্যাটফর্মটি প্রথমে সংবিধান, বাজেট ও স্টার্টআপ ফিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে। পরে ধীরে ধীরে আরও বিভিন্ন ফিচার এতে যুক্ত করা হবে-বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ভবিষ্যতে এটা মাইগ্রেট করে আমাদের ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারে হোস্ট করা হবে এবং নিয়মিত আপডেট ও ব্যবহার বান্ধব করা হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমরা পাবলিক-প্রাইভেট-একাডেমিয়া পার্টনারশিপের ভিত্তিতে এই কাজটা করেছি।
তিনি বলেন, এআই এর ইতিবাচক প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের সকল লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ও স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে তুলতে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ ও এডিপি নিয়ে আরও জিপিটি তৈরি করে জি-ব্রেইন’কে সমৃদ্ধ করা হবে।
পলক বলেন, নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এআই’কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি এআই’র ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় এআই আইনও প্রণয়ন করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উদ্বোধন ঘোষণা করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আরও বলেন-দেশের সংবিধান, বাজেট ও স্টার্টআপ-এ তিনটি জিপিটি ফিচার নিয়ে জি-ব্রেইনবিডি.এআই প্ল্যাটফর্মটি যৌথভাবে তৈরি করেছে ওরিয়ন ইনফরমেটিকস ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। ২৫ লাখ টাকার উদ্ভাবনী অনুদানের অর্থে জি-ব্রেইন তৈরি করা হয়েছে।
বুধবার (৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর এ টুলসটির উদ্বোধন ঘোষণা অনুষ্ঠানে জি-ব্রেইনের বৈশিষ্ট্য ও আর্কিটেকচার উপাস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টি কাজী জামিল আজহার। তিনি জানান, এআই অনেকটাই মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে। মানুষের ব্রেইন যেভাবে চিন্তা করে, এটাও একইভাবে চিন্তা করতে সক্ষম।
কাজী জামিল আজহার আরও বলেন, কি-ওয়ার্ড সার্চের ক্ষেত্রে ‘ভেক্টর বেইজড’ বড় ইস্যু। তাই এআই মানুষের মতো ডিটারমেনিক নয়। তার ফলাফল সবসময় একই থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ডাটা সেন্টার থেকে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এআই সেবা পেতে তাদের ডাটার বিপরীতে অর্থ পাঠিয়ে ফলাফল পেতে হয়। এজন্য জাতীয়ভাবে নিজস্ব এআই থাকা দরকার। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রনজিৎ কুমার জানান, গুগল, মাইক্রেসফটের মতো আমরাও জাতীয়ভাবে ইনোভেশন তহবিলের সহায়তায় জি-ব্রেইন তৈরি করা হয়েছে। এটি ন্যাশনাল ডাটাসেন্টারে সংরক্ষিত থাকবে। সরকারি চাকুরিদের তাৎক্ষণিক তথ্যসেবা পেতে এই প্লাটফর্মটি কাজে লাগবে।
ওরিয়ন ইনফরমেটিকস চেয়ারম্যান স্থপতি ইকবাল হাবিব বললেন, সারা পৃথিবী যখন প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ তখন থেমে থাকে না। করোনার সময় আইসিটি বিভাগ প্রমাণ করেছে বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যাবে না। পরিবর্তনের সময় নিজেদের বদলাতে না পারলে ঝড়ে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে তিনটি জিপিটি তৈরির মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পারলাম চ্যাটজিপিটির অধীন থাকবো না।
আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন বলেছেন, এআই-কে আমি আলাদীনের দৈত্য মনে করি। তার কাছে আদেশ করা মাত্রই সেবা পাওয়া যায়। তাই তাকে কাজে লাগাতে না পারলে এই দৈত্য আমাদের খেয়ে ফেলবে। তাই একে পরিচালনার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এজন্য জি-ব্রেইনে বাংলাভাষা ইনপুট করার পরামর্শ দেন তিনি।
এআইকে পারমাণবিক বোমার সঙ্গে তুলনা করে পলক আরও বলেন, এআই নিজে কাজ করতে পারে বলে এতে মারাত্মক ঝুঁকিও রয়েছে। ডিপফেক, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে আমাদের চাওয়া-পাওয়া, রাগ-ক্ষোভ সব জেনে যাচ্ছে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আইডিয়া প্রকল্প পরিচালক আনোয়ার হোসেনসহ আইসিটি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।