প্রকাশিত: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক:
যেকোনো মূল্যে অপরাধীদের দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন-আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ব্যবস্থা করা হবে, কিন্তু যারা আত্মসমর্পণ করেননি, তাদের কী হবে শুধু আল্লাহই জানেন। সুন্দরবনের মতো শিগগির বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলকে দস্যু মুক্ত ঘোষণা করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০মে) দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র্যাব-৭-এর এলিট হলে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘চিন্তার বিষয় হলো একজন পঞ্চাশোর্ধ নারীও জলদস্যু। মূলত ক্ষমতাশালীদের হাতে নির্যাতিত হয়ে অনেকে এ পথ বেছে নেন। এমন অনেক গল্প আছে। আমরা তাদের সুপথে ফেরার ও সমাজে করে খাওয়ার মতো ব্যবস্থা করছি। তাদের মামলাগুলো তুলে নিয়ে সহায়তা করব। তবে খুন ও ধর্ষণের অভিযুক্তদের মামলা তুলব না।’
তিনি বলেন- সুন্দরবনে জলদস্যুদের ভালো অবস্থা দেখে আজ তারা উদ্বুদ্ধ। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সিকিউরিটির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ওইসব এলাকায় জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আজ এখানে একজন নারী জলদস্যুও আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
র্যাবের প্রশংসা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘র্যাব অনেক চড়াই-উৎরাই পরেও স্ব-মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেশে যখন জঙ্গির উত্থান হচ্ছিল। অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছে র্যাব। সুরক্ষা দিতে গিয়ে নিজেদের জীবন দিয়েছে ৩৩ জন র্যাব সদস্য।’
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম আর আগের মতো নেই। এখানে টানেল হয়েছে, বে-টার্মিনাল হচ্ছে। এখানে কেন দস্যুতা থাকবে?
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আত্মসমর্পণ করার পর জঙ্গিবাদ-দস্যুপনায় পুনরায় ফিরে গেলে তাদের ছাড় নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আত্মসমর্পণের পর আমরা তাদের প্রতি বেশি খেয়াল রাখছি। যদি তারা পুনরায় এসবে ফিরে যায়, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের মামলা ও অন্যান্য সব সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের কথার বরখেলাপ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, আমরা তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। আজকে যারা আত্মসমর্পণ করছেন সবাইকে স্বাভাবিক জীবনে স্বাগত জানাই।’
জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ অনুষ্ঠানে নিউজ টুয়েন্টিফোরের বার্তা সম্পাদক সুমন তালুকদার ও সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মীর মোহাম্মদ আকরাম হোসাইনকে ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম র্যাবের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফ, পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নুরে আলম মিনা। এছাড়া আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাহমুদ করিম ও জসীম উদ্দীন।
র্যাব জানায়, সংস্থাটির চট্টগ্রাম ইউনিটের উদ্যোগে ২০১৮ এবং ২০২০ সালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের ৭৭ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এটি অন্যান্য জলদস্যুদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। একপর্যায়ে চট্টগ্রামে বাঁশখালী এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের জলদস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আশার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম র্যাব তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।