প্রকাশিত: ৯:১৪ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘূর্ণিঝড় রেমেল দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে তাণ্ডব চালিয়েছে। এতে জানমালের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। অনেক অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। রিমাল তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত দেশের বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। রেমালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের অন্তত ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অচল হয়ে পড়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা।
আজ সোমবার (২৭মে) এ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্নে খবর জানিয়েছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মুখ্য প্রকৌশলী বিশ্বনাথ শিকদার। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, অন্তত ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগহীন অবস্থায় আছেন। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হবে।
এদিকে এই রেমেলের আঘাতে উপকূলসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মোবাইল নেটওয়ার্ক (বিটিএস) অচল হয়ে গেছে, নেই ইন্টারনেটও। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনসাধারণ। অনেকে ফোনে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ঝড়ে রাজধানীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। অচল হয়েছে পড়েছে মোবাইল ফোনের প্রায় অর্ধশতাধিক নেটওয়ার্ক সাইট।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বলছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক সাইট অচল হওয়ার মূল কারণ বিদ্যুৎ না থাকা। বিদ্যুৎ এলেই সাইটগুলো পর্যায়ক্রমে সচল হবে।
জানা যায়- ৪৫ জেলার ৮ হাজার ৪১০টি মোবাইল টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০০ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিন লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় ছয় জেলায় অন্তত দশজনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঝড়ে উপকূলের ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-এমনটাই জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। তিনি বলেন-এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলায় নগদ সহায়তার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬। এছাড়া দুর্গত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে।