প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘অসৌজন্যমূলক’ বক্তব্য
প্রকাশিত: ১০:০১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অসৌজন্যমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া, পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) জাফর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তিনি আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়ছেন। একই সঙ্গে তার ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিনও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখায় ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের জন্য চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম এমপিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলো। কেন তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা আগামী সাতদিনের মধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর কারণ দর্শানোর জন্য (শোকজ) নির্দেশ দেওয়া হলো। সাতদিনের মধ্যে যদি জবাব না দেওয়া হয়, তবে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বরাবর সুপারিশ করা হবে।
জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী অন্যায় করেছেন দাবি করে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন তাকে। এ বিষয়ে জানতে এমপি জাফরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। মনোনয়ন না পেয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় পেকুয়ায় আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে জাফর আলম বলেন, ‘আমি একবার মনোনয়ন পেয়েছি। কিন্তু আমি শতবার মৃত্যুর মুখে আপনার জন্য গিয়েছি। আমি আপনার জন্য আমার জীবনে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। আমি কক্সবাজারে এক মিটিংয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। আপনাদের থ্রি স্টার হোটেলে রেখেছি। মাতারবাড়িতে ৪০ হাজার মানুষকে একদিনের খাবার দিয়ে এক হাজার ট্রাক গাড়ি দিয়ে আমি জনসভাকে সফল করেছি। আর আপনি (শেখ হাসিনা) সেখানে ঘোষণা করলেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি প্রার্থী।’
তিনি বলেন, ‘শোনেন নেত্রী, আল্লাহ উপরে। আমি দোষ করলে আল্লাহ আমার বিচার করবে। কিন্তু আমি মনে করেছি এটা আমার প্রতি অবিচার হয়েছে। আমার মতো একজন সহজ-সরল কর্মীকে, আমাকে বারবার ঠকিয়ে আরেকজনের কাঁধে নৌকা দিয়ে আমার কাছ থেকে নৌকা কেড়ে নিয়েছিলেন। সেদিনও আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে ভোট দিতে না পেরে নেতাকর্মীরা চোখের জল ফেলে চলে গেছে। সেদিনও আমি আপনার কথা শুনেছি।’
এমপি জাফর আলম বলেন, ‘সুতরাং এখন আপনি বলেছেন, সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র ভোট করতে পারবেন। আমি স্বতন্ত্র ভোট করছি। এখানে যদি আমি কারো কোনো ধরনের অশুভ পাঁয়তারা দেখি… আমরা চকরিয়ার মানুষ, শহীদ আব্দুল হামিদের চকরিয়া, আবুল কালমের চকরিয়া-পেকুয়া, এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চকরিয়া। এখানে কোনো অন্যায় আমরা বরদাস্ত করব না, করব না, করব না।’
এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন— আমার চেয়ে নৌকাকে ভালোবাসে এমন কে আছে? দিনে নৌকা রাতে বিএনপি, কার টেলিফোন রিসিভ করে, কার জায়গা দখল করে। সব আমার কাছে খবর আছে। আমাকে পেকুয়ার ভোট দেবেন কি দেবেন না সেটি আপনাদের ব্যাপার। চাঁদাবাজি, দখলবাজি এগুলা চলবে না… চলবে না, চলবে না… সোজা কথা।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এমপি জাফর আলম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করে বক্তব্য দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এই আসনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম।