শহীদি সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি
জুলাই, পিলখানা ও শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ‘শহীদি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে এ সমাবেশ হয়।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে পরবর্তী সময়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো এক আহত ব্যক্তি বলেন, “আমি চোখহারা একজন জুলাই যোদ্ধা। বলতে চাই, এ দেশে আওয়ামী লীগের কোনো পুনর্বাসন হতে পারে না। যারা তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে, তাদের এ দেশে থাকার অধিকার নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যারা দিল্লি বা পাকিস্তানের প্রেসক্রিপশনে দেশ চালাতে চায়, তারা সেই দেশেই চলে যাক। আমরা বাংলাদেশপন্থীরা নতুন দেশ গড়ব। আহত ও শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন করতে হবে।”
সমাবেশে শহীদ সাইমের মা বলেন, “আমার ছেলে কী অপরাধ করেছিল যে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলো? আমি শহীদের মা হয়ে বলছি—আওয়ামী লীগ যেন আর এ দেশে রাজনীতি করতে না পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা এ বি জোবায়ের বলেন, “জুলাই এখনও শেষ হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কেউ কেউ টাকার পাহাড় গড়েছে, আর আমরা এখনও লড়ছি। আমরা চাই—নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক এবং গণভোটের মাধ্যমে দলটিকে চিরতরে বিদায় দিতে হবে। শাপলা চত্বর ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ সব ঘটনার বিচার এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে।”
ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। তাদের পুনর্বাসনের আগে আমাদের গলায় ফাঁসির দড়ি পড়বে। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আমাদের সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, পুসাবের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জাকারিয়া, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আব্দুল ওয়াহেদ, শহীদ সজলের মা, শহীদ সাইমের পরিবারসহ জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
সমাবেশ থেকে উত্থাপিত চার দফা দাবি:
১. আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. শাপলা চত্বরের ঘটনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার শুরু করতে হবে।
৩. পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচারের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, এসব দাবিতে তারা আগামী ১০০ দিন দেশের ৬৪ জেলায় গণসংযোগ কর্মসূচি চালাবে। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।