পারভেজের মায়ের আহাজারি :‘পিটনা দিত, হাত-পা ভাইঙ্গা দিত, জীবন নিলো কেন?’
রাজধানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২২) হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও থামেনি তার মা পারভীন ইয়াসমিনের আহাজারি। সোমবার (২১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে নিজ বাড়িতে পুলিশ ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলেরে পিটনা দিত, হাত-পা ভাইঙ্গা দিত, জীবন নিলো কেন? শুধু তিনজন না, মূল হত্যাকারীরা কারা, আগে তাদের ধরেন। রিমান্ডে নেন, পিটিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। দ্রুত ফাঁসিতে ঝুলান। না হলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।
স্বজনদের শত সান্ত্বনাতেও থামেনি তার কান্না। আশপাশে থাকা অনেকের চোখেও পানি।


নিহত পারভেজের বাবা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সুখের সংসার ছিল। তুচ্ছ ঘটনায় আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। গ্রেপ্তার তিনজন এজাহারভুক্ত না হলেও তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
পারভেজ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলকর্মী ছিলেন। তার বাবা জসিম উদ্দিন প্রায় ৯ বছর কুয়েতে ছিলেন। বিশ্বব্যাংকের একটি দাতা সংস্থার চাকরি ছেড়ে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য প্রবাস জীবন বেছে নেন তিনি। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে রোববার সকালে দেশে ফেরেন।
নিহতের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর ১৯ এপ্রিল বনানী থানায় মামলা করেন। এতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগত মিলিয়ে আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন:
মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০), মো. মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)।
একজন মেয়েকে দেখে হাসাহাসির বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুসমা ছোঁয়াতী ও আবুল হাশেমের নজরে এলে উভয়পক্ষকে প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে মীমাংসা করা হয়।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করার পর বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বনানীর ১৭ নম্বর সড়কে পারভেজ ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, পারভেজ ও তার বন্ধুরা বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার ওপর নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাকালে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে উল্লিখিতসহ অজ্ঞাত আসামিরা হাতে ছুরি-চাকু, চাপাতি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বনানী থানাধীন ১৭ নম্বর সড়কে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ধাওয়া করে।
দৌড়ে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশকালে মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসানসহ অন্যরা পারভেজ ও তরিকুল ইসলামকে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসান পারভেজকে শক্ত করে ধরে রাখে আর মেহেরাজ ইসলাম ছুরিকাঘাত করে।