ওয়ারেন্টি দিচ্ছি, দেশের মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে: জামায়াত আমির

লালমনিরহাট সংবাদাতা:লালমনিরহাট সংবাদাতা:
প্রকাশিত: ৮:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে নিহত লালমনিরহাটের যুবক হাসিনুরের প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “হাসিনুর কি মানুষ নয়? বুকের ওপর পা দিয়ে গুলি করে হত্যা—এটা কেমন মানবতা? প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমাদের সম্মান নিয়েও তাদের ভাবতে হবে।”

শনিবার (১৯ এপ্রিল) লালমনিরহাট শহরের কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন রাষ্ট্র গড়তে চাই যেখানে মসজিদ, মন্দির বা গির্জা পাহারা দিতে না হয়। সংখ্যালঘু নয়, দেশের প্রতিটি মানুষই নিরাপত্তা পাবে। আমরা ওয়ারেন্টি দিচ্ছি—দেশের সব মানুষ সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচবে। আমরা আল্লাহকে ভয় করি, আর যারা তাঁকে ভয় করে, তারা কখনোই কারও ইজ্জত বা সম্পদ হরণ করে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। তবে নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার জরুরি। সংস্কার ছাড়া পেশিশক্তির নির্বাচনে দেশের মানুষ অংশ নেবে না।”

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, গুম-খুনে দেশের কণ্ঠরোধ করেছে। কিন্তু জনগণের আন্দোলনে তারা শুধু ক্ষমতা নয়, দেশ ছেড়েও পালিয়েছে। যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, তারা দেশ ছেড়ে পালায় না বা বিদেশে টাকা পাচার করে বেগমপাড়া বানায় না।

ফ্যাসিবাদ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি এখনো চলছে। সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ শুরু করেছে, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই।

Nagad

দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন বেতন দিতে হবে যাতে তারা সৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। রাষ্ট্রযন্ত্রই তাদের দুর্নীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে সব শ্রেণিপেশার মানুষ সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবে।

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ডা. শফিক বলেন, বর্তমানে শিক্ষিতরা নিজেকে রাজা মনে করে। শিক্ষাজীবন শেষে তারা কর্মসংস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে চাই, যেখানে শিক্ষাজীবন শেষে তরুণরা সরাসরি কর্মস্থলে যেতে পারবে।

নারীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “৫৪ বছরের কোনো সরকারই নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। অনেকে বলেন জামায়াত এলে নারীরা চাকরি করতে পারবে না, এটা ভুল ধারণা। আমরা আগে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, তারপর গড়ে তুলব নিরাপদ কর্মস্থল। এমন বাংলাদেশ গড়ব যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলতে পারবে, কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহসও পাবে না।”

জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু, হাতীবান্ধা হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি পুস্পজিৎ রায়সহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

জনসভা শেষে জামায়াত আমির বিএসএফের গুলিতে নিহত হাসিনুরের পরিবারের খোঁজখবর নিতে তাদের বাড়ি যান এবং পরে সেখান থেকে নীলফামারীর উদ্দেশে রওনা দেন।