ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২৫

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই মুজিবনগর নামে অভিহিত করা হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। এর আগে, ১০ এপ্রিল গঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার। ওই ঘোষণায় শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়।

এছাড়া, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমদ পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। জেনারেল এমএজি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এদিন ১২ জন আনসার সদস্য ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। ১১ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ বেতারে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার সম্প্রচারিত হয়।

মুজিবনগরে সরকার গঠনের কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনী হামলা চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে নেয়, ফলে অস্থায়ী সরকার ভারতে গিয়ে কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হয়। ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম সভায় দফতর বণ্টন করা হয়। এই সরকারের নেতৃত্বেই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

আজ মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)। এরপর গার্ড অব অনার ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

Nagad

এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘‘মুজিবনগর সরকার ছিল স্বাধীনতার সাংবিধানিক ভিত্তি। এটি প্রবাসী বা কাগুজে সরকার নয়। এর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই শপথগ্রহণ একটি ঐতিহাসিক ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়, যা সর্বদা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণীয় রাখা উচিত।’’

তবে, মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রসঙ্গও উঠে আসে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শতাধিক তরুণ মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যসহ ‘১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার’-এর অন্যান্য ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে।

এ বিষয়ে ফারুক ই আজম বলেন, ভাস্কর্যগুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে, তবে সঠিক ইতিহাসের ভিত্তিতে। এখানে কোনো বিকৃতি আরোপ করা হবে না, আবার ইতিহাস মোচনও হবে না।

এদিকে, মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ জানিয়েছেন, এবার বড় পরিসরে মুজিবনগর দিবস পালন করা হচ্ছে না। স্মৃতিসৌধে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভাস্কর্যগুলোর পুনর্নির্মাণের বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।