অত্যাচার-প্রতারণায় ভাটা পড়েছে নারী শ্রমিক রপ্তানিতে

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানো নারী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত নারীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং প্রতারণার শিকার হওয়ায় অনেকেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরছেন। পাশাপাশি দক্ষতার অভাবও নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কমছে নারী শ্রমিকের সংখ্যা
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ২১ জন নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন। তবে ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ৫ লাখ ৫০ হাজার ২১২ জন নারী বিদেশে গেলেও, পরবর্তী ৫ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৯ জনে।

২০২৪ সালে মাত্র ৬১ হাজার ১৫৮ জন নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন, যা গত ১০ বছরে করোনাকাল বাদে সর্বনিম্ন। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে নারীদের বিদেশে যাওয়ার হার ২২ শতাংশ কমেছে।

অত্যাচার ও প্রতারণার শিকার
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নরসিংদীর তোফাজ্জল মিয়া জানান, তার বোন সুমাইয়া সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হন। সোনারগাঁও ওভারসিজ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো হলেও, অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি।

বিএমইটি জানায়, ২০২৪ সালে ৩৬৩ জন নারী শ্রমিকের অভিযোগ পাওয়া গেলেও বছরের শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১০০টি অভিযোগের।

দক্ষতার অভাব এবং নতুন চ্যালেঞ্জ
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের অভাব, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা, এবং এজেন্সিগুলোর স্বচ্ছতার অভাবের কারণে এই সংকট বাড়ছে। বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, অনেক নারীই সেখানে গিয়ে কম স্যালারি এবং চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন দক্ষ শ্রমিকদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, ফলে সেমি-স্কিলড শ্রমিকদের চাহিদা কমছে।

Nagad

অ্যাটসেক দক্ষিণ এশিয়ার চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমানোর পাশাপাশি সেক্টরভিত্তিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব
অভিবাসী ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনিরের মতে, নারীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন। সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান এবং ইউরোপের কিছু দেশে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে গবেষণা হলেও সেসব বাজার এখনো এক্সপ্লোর করা হয়নি।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার হার আরও কমবে। সেক্টরভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ অভিবাসনের জন্য ১০ বছরের একটি রোডম্যাপ করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।