বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে প্রভু নয়: গোলাম পরওয়ার
১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪ একসূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সকল আন্দোলন সংগ্রাম ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তিনটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনটি শাসক গোষ্ঠীর পতন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের আইয়ুব খান, ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের এরশাদ এবং সবশেষে ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হয়। এই পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ – শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বিপ্লব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ মানে হচ্ছে যাকে বাঁধা দেওয়া যায় না। বাংলাদেশের জনগণ ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে সেটি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে। দুই হাজারের অধিক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। হাজার হাজার আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তবুও ছাত্র -জনতাকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান এককভাবে কোন রাজনৈতিক দলের নয়, এদেশের ছাত্র-জনতার। অনেক সত্য ইতিহাস কেন লেখা হয় না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাষ্টার মাইন্ড কারা?- এটাও কেউ কেউ ছিনতাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বড় দলের নেতারা বলে, ‘এই আন্দোলনে আমরা সম্পৃক্ত নই’। আর তাদের ছাত্র সংগঠন দাবি করে তাদের নেতৃত্বে বিপ্লব হয়েছে! অথচ যারা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে সেই ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারী সকলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাক্ষী এই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড কারা। রামদা দলের হাত থেকে ইতিহাস বিকৃত করা বন্ধ করতে এদেশের ছাত্র-জনতা আবারো অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়াবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশের জনগণের দুশমন পরিচয় দিয়েছে। তারা আমাদের ভূখণ্ডকে আসামের সাথে যুক্ত করে মানচিত্র প্রকাশ করে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে। আমাদের বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দিবস দাবি করে নরেন্দ্র মোদী পোস্ট করার মাধ্যমে মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই করতে চেয়েছে। ভারতকে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা শত্রু মনে করি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের জনগণের সাথে আমাদের আগামীতেও বন্ধুত্ব হবে। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে প্রভু নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা আমাদের জনগণ ঠিক করবে। কোন দেশের পররাষ্ট্র সচিব এদেশে এসে সেটি ঠিক করে দেওয়ার কোন অধিকার নাই। ভারত যদি মনে করে আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা অন্য কোন দলকে সমর্থন দিয়ে সরকারে বসিয়ে এদেশে আবারো তাবেদারি করবে তবে এদেশের ছাত্র-জনতা সেই সরকারকেও উৎখাত করে ভারতে পাঠিয়ে দিবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল আজিজ।
মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন , ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী ড. আব্দুল মান্নান।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, কামরুল আহসান হাসান, শাহিন আহাম্মদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ।