বেক্সিমকোর ঋণ কেলেঙ্কারি: রিজার্ভ চুরিকেও হার মানালো: শ্রম উপদেষ্টা
দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের নামেই ১১টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে ঋণ নেওয়া হয়েছে। অস্তিত্ববিহীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া হয়েছে আরও ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে বেক্সিমকোর। উপযুক্ত জামানত ছাড়াই এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের এই ঋণ কেলেঙ্কারিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির থেকেও বড় কেলেঙ্কারি বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।


সাখাওয়াত হোসেন জানান, বেক্সিমকো টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১১টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে উপযুক্ত জামানত ছাড়াই এই ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৪২০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক থেকে ৯৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৩১৫ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ৩৩৩ কোটি, এবি ব্যাংক থেকে ৯৮৩ কোটি, এক্সিম ব্যাংক থেকে ৪৯৭ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে ৯৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৭৮ কোটি ২২ লাখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) থেকে ৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে জানান শ্রম উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ টাকা বেক্সিমকো টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের ঋণ। মোট হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগেই বলেছি ১৬টি অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এসব ঋণ ব্যাড ঋণ (খেলাপি ঋণ) কি না তা আমরা ব্যাংকের কাছে জিজ্ঞাসা করবো। এসব ব্যাংকের একটা খতিয়ান বা ইনকোয়ারি করা হবে। বিশেষ করে এই টাকাগুলো কীভাবে নেওয়া হয়েছে। আমরা যা দেখতে পারছি চর্মচক্ষে মনে হয় ব্যাংকে আমাদের প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছিল (বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি) তার থেকে বড় কেলেঙ্কারি। এই টাকা আমাদের টাকা, আপনাদের টাকা, ট্যাক্সের টাকা ব্যাংকে রেখেছে লোকজন। সেখান থেকে এটা উজাড় হয়েছে।”
শ্রম উপদেষ্টা আরও বলেন, “বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের নিয়ে আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। আমরা দেখতে চাই, এই ঋণ কেলেঙ্কারির পেছনে কারা জড়িত এবং কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।”
এই ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা এবং ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনায় ব্যাংকগুলোর তদারকি ও জবাবদিহিতার অভাবই মূল কারণ। এই কেলেঙ্কারির তদন্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
বেক্সিমকো গ্রুপের এই ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে এখন পর্যন্ত গ্রুপের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনায় দেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।