গাজায় আজ থেকেই যুদ্ধবিরতি, ঘরে ফেরার প্রস্তুতিতে ফিলিস্তিনিরা
গাজার দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে আজ রোববার (১৮ জানুয়ারি) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা) এ চুক্তি কার্যকর হবে। বহু প্রতীক্ষিত এই যুদ্ধবিরতির খবরে গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের ভিটেমাটিতে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সৌআদ ওয়ারশাগা বলেন, “আমরা আমাদের জায়গায় এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে ফিরে যেতে চাই। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জন্য কালকের অপেক্ষা আর সইছে না।”


তবে ফিলিস্তিনিদের মনে আনন্দের পাশাপাশি রয়েছে সংশয়। লতিফা কাশকাশ বলেন, “আমি খুশি যে আমার এলাকায় ফিরে যেতে পারবো। কিন্তু ইসরায়েলিদের বিশ্বাস করতে পারি না। আমরা সবকিছু হারিয়েছি। ঘরে ফিরলেও হয়তো আবার তাঁবুতেই থাকতে হবে।”
আল-জাজিরার আরবি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের কেন্দ্র থেকে তাদের যানবাহন সরিয়ে নিচ্ছে। তারা ফিলাডেলফি করিডোরে অবস্থান নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে তারা গাজায় শিশুদের জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ শুরু করবে। সংস্থাটি জানায়, গাজার ১ কোটি ১০ লাখ শিশুর বেশিরভাগই জরুরি খাদ্যের সংকটে রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রাক্কালে ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে গাজায় হামলা চালায়। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে বেশ কিছু আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উত্তর গাজায় বিমান হামলা ও রাফাহ শহরে গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে প্রথমদিনেই তিনজন ইসরায়েলি জিম্মি এবং ৯৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ যুদ্ধবিরতিকে সাময়িক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “যদি দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় অগ্রগতি না হয়, তবে গাজায় হামলা আবার শুরু করার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি মানুষ জিম্মি হয়েছিলেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাধ্যমে গাজায় মানবিক সংকট নিরসনের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে এ চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।