রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সীমান্তে দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে এবং এটি ঠেকানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “সীমান্তে দুর্নীতি রয়েছে, যা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গারা দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তারা নৌকায় চড়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে। এভাবে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন।”
সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি তাগিদ জানানো হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।


রোববার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান। তিনি সম্প্রতি থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, চীন এবং লাওসের মধ্যে এক অ-আনুষ্ঠানিক পরামর্শ সভার বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করা হলেও, এ বিষয়টি তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেন, “আমার বিশ্বাস, আরেকটি রোহিঙ্গা ঢল আসবে না, যদিও কিছু কিছু মানুষের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা আমাদেরও আছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে সেই ঢল ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
তৌহিদ হোসেন জানান, মিয়ানমারকে বলা হয়েছে, “আপনারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, অন্যরা তা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারি না। সুতরাং, আপনাদেরই দেখতে হবে কীভাবে সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যার সমাধান করবেন।”
এ সময় তিনি জানান, সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল সীমান্ত সমস্যা, মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক অবস্থা। তিনি আরও বলেন, “সবারই মিয়ানমারের চলমান সংকটের সমাধান চাওয়ার কথা উঠে এসেছে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসার, মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান সোয়ে, লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলুয়েমেস্কেই কোমাসিথ, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এবং চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাউজু। বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি আরও জানান, গত দুই মাসে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তবে, তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন পথে তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।
সীমান্ত সমস্যার আলোচনায় তিনি বলেন, ‘বিশেষত উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ সীমান্ত নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। পশ্চিম সীমান্ত এবং তার সঙ্গে জড়িত স্বার্থ নিয়েও কথা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে স্ক্যাম সেন্টার গড়ে ওঠা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্য দেশগুলোর উদ্বেগ যেমন ছিল, তারচেয়ে বেশি উদ্বেগ ছিল অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর নিয়ে। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হলে, শান্তি বা স্থিতিশীলতার স্বপ্ন কখনও বাস্তবায়িত হবে না।’