ডিজিটাল অতীত কি? চাইলেই কি সব মুছে ফেলা সম্ভব?
ডিজিটাল যুগে প্রতিদিন আমরা অনলাইনে অসংখ্য তথ্য তৈরি করি, শেয়ার করি এবং সংরক্ষণ করি। ফেসবুকের পোস্ট, টুইটারের স্ট্যাটাস, গুগলে সার্চ হিস্ট্রি বা ক্লাউডে রাখা ছবি—এসবই আপনার -ডিজিটাল অতীত। অর্থাৎ ডিজিটাল অতীত হলো অনলাইনে আপনার ব্যক্তিগত কার্যকলাপ ও তথ্যের একটি রেকর্ড। এর মধ্যে রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা পোস্ট, ছবি, ভিডিও, ইমেইল যোগাযোগ, সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করা তথ্য, অনলাইন কেনাকাটার রেকর্ড, ডেটা স্টোরেজে রাখা ফাইল বা তথ্য, এইসব কার্যকলাপের ছাপ ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে থাকে এবং একবার অনলাইনে আপলোড হলে তা মুছে ফেলা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, চাইলেই কি এই ডিজিটাল অতীত মুছে ফেলা সম্ভব?


অনেকেই মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইট থেকে কোনো কিছু ডিলিট করলে তা একেবারে মুছে যায়। বাস্তবে তা পুরোপুরি সত্য নয়।
ব্যাকআপ সার্ভার: অনেক প্ল্যাটফর্মে তথ্য দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ব্যাকআপ সার্ভারে জমা থাকে। ব্যবহারকারী তার প্রোফাইল ডিলিট করলেও কোম্পানি ওই ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে।
তৃতীয় পক্ষের ডেটা সংগ্রহ: তথ্য বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কোনো ওয়েবসাইটে ছবি শেয়ার করলে সেটি অন্য কেউ ডাউনলোড বা সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
ওয়েব আর্কাইভ: ইন্টারনেট আর্কাইভ এবং ওয়েবক্যাশিং টুলের মাধ্যমে আপনার মুছে ফেলা ডেটাও সংরক্ষিত থাকতে পারে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া তথ্য: আপনার কোনো পোস্ট ভাইরাল হলে বা মিডিয়ায় শেয়ার করা হলে তা সরানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। কিভাবে আপনার তথ্য অন্যের কাছে থাকতে পারে; চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মুছে ফেলার উপায় কী?
পুরোপুরি ডিজিটাল অতীত মুছে ফেলা কঠিন হলেও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা সীমিত করা যায়:
সোশ্যাল মিডিয়ার ডেটা রিমুভ করা: অ্যাকাউন্ট ডিলিট বা ডিএক্টিভেট করা।
তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সরানো: ওয়েবমাস্টারের সাথে যোগাযোগ করে ডেটা রিমুভের অনুরোধ করা।
সার্চ ইঞ্জিন থেকে তথ্য সরানো: গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে “রিমুভাল রিকোয়েস্ট” জমা দেওয়া।
প্রাইভেসি সেটিংস হালনাগাদ করা: অনলাইন অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস শক্তিশালী করা।
ডিজিটাল অতীতের গুরুত্ব
ডিজিটাল অতীত যেমন অনেকের জন্য স্মৃতির ভাণ্ডার, তেমনি এটি হতে পারে ঝুঁকির কারণ। ভুল তথ্য, বিতর্কিত পোস্ট বা ব্যক্তিগত তথ্যের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ভবিষ্যতে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তাই সতর্ক থাকা জরুরি। অনলাইনে যা কিছু শেয়ার করবেন, তা দীর্ঘদিনের জন্য আপনার “ডিজিটাল ছাপ” হিসেবে থেকে যাবে।
সূত্র: বিবিসি নিউজ ও ডিজিটাল ডেটা ও অনলাইন প্রাইভেসি এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত সাধারণ ধারণার ওপর ভিত্তি করে লেখা।