বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সাহসী কিশোরী আনজুমান

নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী ছয়জন কিশোরীর বাল্যবিয়েও বন্ধ করেছেন সাহসিকতা আর সচেতনতার মাধ্যমে। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর পাথরডুবী গ্রামের আনজুমান আজ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার নাম।

পাথরডুবী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে বর্তমানে ভুরুঙ্গামারী মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আনজুমান। নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে নিরলস কাজ করছেন। মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির সিএনবি প্রকল্পে যুক্ত হয়ে তিনি সাইবার বুলিং থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, বাল্যবিয়ে, এবং নারী অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে চলেছেন।

স্কুলে পড়াকালীন আনজুমানের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে। তখন বিয়ে, সংসার সম্পর্কে কিছুই না বুঝলেও পড়াশোনা এবং বড় হওয়ার স্বপ্ন তার চোখে ছিল। তাই তিনি নানাবাড়িতে গিয়ে নানানানীকে সব খুলে বলেন। পরে তাদের সাহায্যে বাবা-মাকে বোঝান এবং প্রস্তাবে সরাসরি ‘না’ করেন। এখান থেকেই শুরু তার বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই।

একদিন পাশের বাড়ির নুপুর নামের এক কিশোরীর বাল্যবিয়ে হচ্ছিল। আনজুমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সেই বিয়েটিও বন্ধ করেন। এরপর থেকে একে একে ছয়টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। শুধু বিয়ে বন্ধ নয়, গ্রামের অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ২০টিরও বেশি উঠান বৈঠক আয়োজন করেছেন তিনি।

কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হন আনজুমান। তিনি বলেন,প্রথমদিকে সবাই আমাকে ছোট ভেবে অবহেলা করত। কিন্তু আমি আমার কাজ দিয়ে প্রমাণ করেছি। এখন সবাই আমার কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনে।”

নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আনজুমানের স্বপ্ন বড়। তিনি বলেন,“আমি পুলিশ অফিসার হয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করতে চাই। সব শিশুকে স্কুলমুখী করতে চাই।”

Nagad

আনজুমানের বাবা-মা তার কাজ নিয়ে গর্বিত। মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির সহায়তায় বাড়িতে একটি মুদি দোকান চালু হয়েছে, যার আয়ে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাথরডুবী ইউনিয়নের স্থানীয় অভিভাবক তসলীম উদ্দিন, জাহিদুল ইসলাম ও শাহানাজ পারভীন বলেন, আনজুমানের মতো একটা মেয়ে নিজে সচেতন হয়েছে এবং আশপাশের বাল্য বিয়েগুলো প্রতিরোধ করেছে। আমাদের ঘরে ঘরে যেন আনজুমানের মতো মেয়ে জন্মগ্রহন করে। এমন মেয়ে থাকলে বাল্য বিয়ের ব্যধি থেকে আমরা মুক্তি পাবো।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহের উদ্দিন বলেন, আনজুমানের পদক্ষেপের কারনে আমরা ওয়ার্ডে বাল্য বিয়ে এখন শুন্যের কোটায়।

পাথরডুবী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর জানান, বাল্য বিয়ে নিয়ে কাজ করছে আনজুমান। নিজের বিয়ে ঠেকিয়েছে এবং অন্যান্যদের বিয়েও বন্ধ করেছে। সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমি সহযোগিতা করব।