বাংলাদেশ হোন্ডার রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন অধ্যায়, ডিউটি ফ্রি সুবিধার দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৭:৫৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে বাংলাদেশে তৈরি জাপানি হোন্ডা’র এক্সব্লেড মডেল মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালায় বিমান পথে রফতানি শুরু করে বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড (বিএএসচএল)। এবার ১৪টি ইউনিট নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমুদ্রপথে রফতানি শুরু করলো প্রতিষ্ঠানটি। এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে বিশ্বমানের দুই চাকার বাজারে উন্নীত করতে বিএইচএল-এর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে এবং বিশ্বজুড়ে কিছু উন্নত অঞ্চলে উচ্চ মানসম্পন্ন মোটরসাইকেল সরবরাহ করতে সাহায্য করবে-বলে জানায় হোন্ডা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার কাছের জেলা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার আব্দুল মোনেম এক্সপোর্ট জোনে স্থাপিত নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সেখানেই সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এসময় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশেও রফতানি করার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন বিএএসচএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিগেরু মাতসুজাকি। এই পরিকল্পনা তুলে ধরার পাশাপাশি এ বছরেই বাংলাদেশে হোন্ডার ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির কাজ শুরুর কথা জানানো হয়। এসময় বাংলাদেশে উৎপাদন বাড়াতে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে ডিউটি ফ্রি সুবিধা দাবি করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএইচএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও, শিগেরু মাতসুজাকি বলেন, হোন্ডা বাংলাদেশ মোটর সাইকেল উৎপাদন করে নতুন কর্মসংস্থান শুরু করেছে। কিন্তু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় হোন্ডার কেডি অংশের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এই সংকট কাটিয়ে আমরা স্থানীয় সরবরাহ বৃদ্ধি ও রপ্তানি শুরুর মধ্যমে ডলার সংকট দূর করতে ভূমিকা রাখতে চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যন্ত্রাংশ আমদানি ‍ও শুল্ক জটিলতা রোধ হলে বাংলাদেশে ব্যবসায় করার সুযোগটা আরো প্রসারিত হবে।

বিএইচএল-এর চিফ প্রোডাকশন অফিসার, হিরোইকি ইয়াসুনাগা বলেন, ‘গুণগত মান ও উদ্ভাবনের প্রতি বিএইচএল টিমের মনোযোগ এই মাইলফলক অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি উৎপাদন দক্ষতা প্রদর্শন করতে পেরে গর্বিত এবং আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে কঠোর মানদণ্ড পূরণকারী বিশ্বমানের মোটরসাইকেল উৎপাদনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এইচআর ও অ্যাডমিন এ কে এম আবিদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হোন্ডা বাংলাদেশে চিফ অফিসার হিরোইকি ইয়াসুনাগা। এছাড়াও ব্যবসায় পরিকল্পনা ও বাজার অংশের বিষয় তুলে ধরেন বিএইচএল-এর চিফ মার্কেটিং অফিসার, শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের এই অংশগ্রহণ শুধু আমাদের ব্র্যান্ডের বৈশ্বিক সুনাম উন্নত করে না, বরং আমাদের স্থানীয় কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলোকে আরো দৃঢ় করে। আমাদের বৈশ্বিক দক্ষতা ও স্থানীয় বাজারের সম্ভাবনা বোঝার মাধ্যমে, আমরা বিশ্বজুড়ে গ্রাহকদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবন চালিয়ে যাচ্ছি।”

Nagad

তিনি জানান, একমাত্র হোন্ডাই বাংলাদেশে পুরো ইঞ্জিনটা দেশেই তৈরি করে। বছরে এই কারখানায় ৭০ হাজার মোটর সাইকেল উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। এরমধ্যে পুরোপুরি দেশে তৈরি হয় এক্সব্লেড। প্রতি দিন ২২০টি করে মোটর সাইকেল তৈরি হচ্ছে। এই বাইকটি আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ ১৪টি ইউনিট রফতানি করা হয়েছে। দেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার মোটর সাইকেল।

এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, বাংলাদেশে তৈরি হলেও হোন্ডাগুলো জাপানের টেকনিক্যাল এক্সপার্টরাই যাচাই করা হয়। বাংলাদেশে তৈরি করা এই মোটর সাইকেলটি বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকা বহন করবে। গুয়েতেমালা দিয়ে শুরু হলেও দিনে দিনে এই দেশের সংখ্যা বাড়বে।

এসব তথ্য জানানোর পর বিনিয়োগকারী, ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ১৪টি মোটর সাইকেল বাহী কন্টেইনার যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দরের পথে। এ সময় আরও জানানো হয়-বিএইচএল সফলভাবে জানুয়ারি ২০২৪-এ পরীক্ষামূলক ভাবে গুয়াতেমালায় এক্স-ব্লেড মডেলটি বিমান পথে প্রেরণ করেছে। ভবিষ্যতে দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং আফ্রিকায় রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।