শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যেতে বাধা
আজ ১৫ আগস্ট । জাতীয় শোক দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, রচনা করা হয় ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।


নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ শোকাবহ দিনটি পালিত হবে বলে জানা গেছে। তবে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি সংলগ্ন সড়ক ও আশেপাশের এলাকা দখলে রেখেছেন ছাত্র-জনতা। যেখানে আওয়ামী নেতাকর্মীদের যেতে বাধা প্রধান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভোর থেকেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে বা আশপাশের এলাকায় কালো পোশাকে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রাবাদ মোড় থেকে ৩২ নম্বর এবং মেট্রো শপিং মলের সামনে অবস্থান করেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। একটু পরপর মিছিল নিয়ে আশপাশে প্রদক্ষিণ করছেন তারা। কেউ কেউ ধানমন্ডি ২৭ ঘুরে আবার ৩২ এসে জড়ো হচ্ছেন।
এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ লেক পাড়ও রয়েছে ছাত্রদের দখলে। তাদের প্রত্যেকের হাতে লাঠি এবং পাইপ রয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এর পর সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রায় সব ভাস্কর্য ও নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাজধানীর ধানমণ্ডির জাদুঘরে রূপান্তরিত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হত্যা করা হয় তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে তাকে ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে হত্যা করা হয়।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত থাকতো ইতিহাসের কলঙ্কময় এই দিনটি। ৯৬ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ায় এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট এসেছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে। এ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে কিনা তা জানা যায়নি। সরকারের কোনও কর্মসূচিও পাওয়া যায়নি। যদিও বিগত বছরগুলোতে রাষ্ট্রপতি এই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকার মঙ্গলবার এক বৈঠকে জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করেছে।