সহিংসতা-নাশকতা: ঢাকায় ১৩৩ মামলা, তিনদিনে গ্রেপ্তার ১১১৭
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলাচ্ছে র্যাব-ডিবিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। নাশকতার স্পটের আশপাশ এলাকাসহ অলিগলি, এমনকি বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ঢাকায় সংঘটিত সহিংসতা নাশকতা, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও কার্যালয়ে আগুনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্যে বাধার অভিযোগে ১৩৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত (তিনদিনে) ১১১৭ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে র্যাব ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে গ্রেপ্তার করেছে ১২৬ জনকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন ১১১৭ জন। নিহত হয়েছেন তিনজন। তারা ডিএমপির নায়েক, ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক। ১৩২ জন গুরুতর আহত। তাদের মধ্যে তিন রয়েছেন আইসিইউতে।


ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন জানান, রাজধানীতে সহিংসতা নাশকতায় অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আরও প্রায় এক হাজার আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৬০ জনের অবস্থা গুরুতর।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা জেলা বিএনপির সেক্রেটারি নিপুর রায় চৌধুরী, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বিএনপির নির্বাহী পরিষদের সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান মিল্লাত, জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য সামিউল হক ফারুকী অন্যতম।
চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘটিত সহিংসতা নাশকতায় এবং পুলিশের গুলিতে কতজন নিহত ও আহত হয়েছেন এবং কত মামলা ও কতজন গ্রেপ্তার সে তথ্যও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি পুলিশ সদর দপ্তর। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে নিহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা তিনজন, আহতের সংখ্যা ১১১৭ জন। ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশের ২৮১ যানবাহন ভাঙচুর ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পুলিশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও স্থাপনা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ২৩৫টিতে।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, এ পর্যন্ত ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা হত্যা-নাশকতায় জড়িত ছিল না, এমন কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি ছিল বলেই দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তারা এরই মধ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছে।
ঢাকার বাইরেও গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশ বিএনপি-জামাতের সদস্য বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের জানান নিজ নিজ জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা।