পরিচালককে ববির থাপ্পড়, উত্তাল ঢালিউড, মুখ খুললেন ববি

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:০৫ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২৪

রাশিদ পলাশ নামে একটি পরিচালককে ভরা বৈঠকে থাপ্পড় মেরেছেন চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি। যা নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে উত্তাল বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা ঢালিউড। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অবাক অনেকে। একজন শিল্পী কীভাবে পরিচালকের গায়ে হাত তোলেন! এই প্রশ্ন সবার। ববির হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার দু’দিন পর অবশেষে এ নিয়ে মুখ খুললেন পরিচালক রাশিদ পলাশ। তার ভাষ্য, ববির সঙ্গে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

সম্প্রতি ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমা ঘিরে এই অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর পাওয়া যায়। সিনেমাটির পরিচালকের বিরুদ্ধে নায়িকা ববির পাহাড় সমান অভিযোগ, শুটিং সেটে পরিচালকের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল পাননি। ঈদুল আজহায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমার পরিচালক রাশিদ পলাশের সঙ্গে চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববির তুমুল দ্বন্দ্ব বাঁধে; যা শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে হাতাহাতিতে।

প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু তো বলছেন, এই ঘটনার পর চিত্রনায়িকা ববিকে নিয়ে কোনো পরিচালক সিনেমা বানাবেন না। তার মন্তব্য, ‘চলচ্চিত্রের মা-বাপ হচ্ছে পরিচালক। সেই পরিচালককে যে শিল্পী সম্মান দিতে জানে না, তাকে নিয়ে তো আমিও সিনেমা বানাবো না।’

আশি ও নব্বইয়ের দশকের নায়িকা শাবানা ও ববিতাদের উদাহরণ টেনে ঝন্টু বলেন, ‘শাবানা-ববিতা এত বড় হওয়ার কারণ, ওরা কখনো পরিচালকের বাইরে কথা বলেনি। পরিচালক যেটা বলেছে সেটাই শুনেছে। শাবানাকে নিয়ে আমি ৩০টির মতো সিনেমা করেছি। আমার জানামতে, সে টিমের সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি। ববিতাও তাই।’

সাপের সিনেমা বানিয়ে খ্যাতি অর্জন করা এই প্রবীণ নির্মাতা আরও বলেন, ‘এখনো অনেক শিল্পী আছে, যারা প্রযোজক-পরিচালক ও সহশিল্পীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। যারা খারাপ ব্যবহার করে, তারা চলচ্চিত্র জগতে বেশিদিন টিকতে পারে না।’

এই কোরবানির ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ময়ূরাক্ষী’ নামে একটি সিনেমা। যেটি পরিচালনা করেছেন মারধরের শিকার পরিচালক রাশিদ পলাশ। ববি সেই সিনেমারই নায়িকা? তাহলে নিজের সিনেমার পরিচালককে কেন থাপ্পড় মারলেন তিনি?

Nagad

জানা গেছে, গত ১৮ জুন রাতে রাজধানীর নিকেতনের একটি বাসায় ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমাটির নানা বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসেন পরিচালক রাশিদ পলাশ ও চিত্রনায়িকা ববিসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজন। সেখানেই কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নির্মাতা রাশিদ পলাশকে থাপ্পড় মেরে বসেন ববি।

এ প্রসঙ্গে ইয়ামিন হক ববি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বন্ধু নই। সে একজন পরিচালক আমি একজন শিল্পী। এতটুকুই। সে কেন বন্ধু দাবি করছে আমি জানি না। আমাদের ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক নয়।’

আপনি শুটিংয়ে সময় মতো আসতেন না এবং পারিশ্রমিক ৩ লাখ টাকা কথা ছিল। এখন নাকি পাঁচ লাখ দাবি করছেন। এমন অভিযোগ নিয়ে কি বলবেন? উত্তরে বলেন, ‘সব মিথ্যা কথা। এমন যদি হতো সে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কিংবা আমার সমিতিতে অভিযোগ জানাতে পারত। সেটা কিন্তু করেনি। তার মানে এমন কিছু হয়নি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আমার কাজে সন্তুষ্ট। তারা আরও আক্ষেপ জানিয়েছে আমাকে ঠিকমতো উপস্থাপন করতে পারেনি বলে। বরং তারা পরিচালকের কাজে বিরক্ত। নিজের দোষ ঢাকতে আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে।’

যোগ করে ববি বলেন, ‘এর আগেও তো অনেক কাজ করেছি। কই কখনও তো কোনো পরিচালক সেটে দেরিতে গিয়েছি বলতে পারেনি। কাজের ব্যাপারে বরাবরই আমি আন্তরিক। এই কাজটি করতে গিয়ে আমার ক্যারিয়ারে বাজে একটা অভিজ্ঞতা হলো। এটা সারাজীবন মনে থাকবে।’

জানা গেছে, ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমার প্রযোজক সব শিল্পীর পারিশ্রমিক পরিচালক রাশিদ পলাশের হাতে দিলেও তিনি শিল্পীদের ঠিকমতো পরিশোধ করেননি। ফলে নায়িকার সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধে নির্মাতার। ফলশ্রুতিতে, পরিচালক রাশিদ পলাশকে চড় মারেন ববি।

তবে পরিচালক-প্রযোজকদের কেউই ববির এহেন আচরণকে সমর্থন করছেন না। তাদের বক্তব্য, যদি কারও পারিশ্রমিক বাকি থাকেও, সেটা প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা করা যেত। তাই বলে একজন পরিচালককে থাপ্পড় মারা অনুচিত। এ ঘটনা একটা খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলে মত তাদের।

যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিল্পী ববির কাজকে সমর্থন করছেন। তাদের অভিযোগ, রাশিদ পলাশের মতো অনেক পরিচালকই প্রযোজকের কাছ থেকে শিল্পীদের পারিশ্রমিক এনেও তা পরিশোধ করেন না। মাসের পর মাস ঘুরান। সিনেমা ফ্লপ হলে তো ওই টাকা আর পাওয়াই যায় না।

কিন্তু এ ঘটনার শেষ কোথায়? কতদূর গড়াবে জল? তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কারণ, ঢালিউডজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চললেও ববির হাতে থাপ্পড় খাওয়ার পরও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেননি নির্মাতা রাশিদ পলাশ। অভিযোগ দেননি পরিচালক বা শিল্পীদের সমিতিতে। হয়তো তিনি মীমাংসার পক্ষে।