কারামুক্ত উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২৪

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মার্কিন গোপন দলিল ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। মার্কিন ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করে নেয়ার চুক্তিতে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সোমবার (২৪ জুন) তার কারামুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ এড়াতে তার দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো।

এক্স বার্তায় উইকিলিকস জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগারের একটি ছোট্ট প্রকোষ্ঠে ১ হাজার ৯০১ দিন আটক ছিলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। কারাগার থেকে বেরিয়েই যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যের কারাগারে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণের বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করা ৫২ বছর বয়সী জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসি বলছে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জ সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছেছেন। ফৌজদারি অপরাধের দোষ স্বীকার করায় অ্যাসাঞ্জকে কারামুক্ত করা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি’র পার্টনার সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে যে, নিজের অপরাধ স্বীকার করার জন্য জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে কারাগারে পাঠানো হবে না। উল্টো, এতদিন তিনি যে কারাভোগ করেছেন, সেটির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা মরিস অ্যাসাঞ্জ এক্স পোস্টে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমর্থকরা বছরের পর বছর ধরে পাশে থেকেছেন বলেই মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবি পূরণ হয়েছে।

Nagad

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেটি অনুযায়ী জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি আগামী ২৬ জুন উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত বলেই বিচারিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওই দ্বীপটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এক নজরে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ:

২০০৬: কম্পিউটার প্রোগ্রামার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন
এপ্রিল-নভেম্বর, ২০১০: ইউএস আর্মির এক হাজার গোপন নথি ফাঁস
জুলাই, ২০১০: মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের আফগানিস্তান অভিযানের প্রায় ৭০ হাজার শ্রেণিবদ্ধ নথি প্রকাশ করে উইকিলিকস
আগস্ট, ২০১০: সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের দুইটি অভিযোগ আনা হয়
আগস্ট, ২০১০: সুইডেনে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানি জারি করা হয়
অক্টোবর-নভেম্বর, ২০১০: যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের ৪ লাখ নথি এবং আড়াই লাখ মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস
ফেব্রুয়ারি, ২০১১: অ্যাসাঞ্জকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় সুইডেনের আদালত
নভেম্বর, ২০১১: আত্মসমর্পণের আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের করা আপিল খারিজ করে দেয় সুইডেনের উচ্চ আদালত
জুন, ২০১২: লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় চান অ্যাসাঞ্জ
আগস্ট, ২০১২: ইকুয়েডর তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন ইতিবাচক সাড়া দেয়
জুলাই, ২০১৪: সুইডেনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে হেরে যান অ্যাসাঞ্জ
আগস্ট, ২০১৫: অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা একাধিক অভিযোগের অনুসন্ধান বন্ধ করে দেয় সুইডিশ আদালত
আগস্ট, ২০১৫: ধর্ষণের অভিযোগে পুনরায় তদন্ত শুরু
এপ্রিল, ২০১৭: ইউএস অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতারের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
মে, ২০১৭: সুইডিশ আদালত তদন্ত বন্ধ করে দেয়
জুলাই, ২০১৮: অ্যাসাঞ্জের ভাগ্য নির্ধারণে বৈঠকে বসে যুক্তরাজ্য-ইকুয়েডর
অক্টোবর, ২০১৮: অ্যাসাঞ্জের জন্য ইকুয়েডর দূতাবাস নতুন আইন আরোপ করে
এপ্রিল, ২০১৯: ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে আশ্রয় হারানোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে
১১ এপ্রিল, ২০১৯: অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্য পুলিশের হাতে তুলে দেয় লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাস
২৪ জুন ২০২৪: যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পান