সাহসিকতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নত পুলিশী সেবা দিন : প্রধানমন্ত্রী

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে যেকোনো চ্যালেঞ্জ সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করে উন্নততর পুলিশী সেবা প্রদান করার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ‘বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা রেঞ্জের ১১০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষ্যে আজ এক বাণীতে এ আহ্বান জানান।

আজ সোমবার (২৪ জুন) ‘বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা রেঞ্জের ১১০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’। ‘সৌরভে গৌরবে ঢাকা রেঞ্জ ফিরে দেখা ১১০ বছর’ এই স্লোগানকে উপজীব্য করে বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা রেঞ্জের ১১০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা এ উপলক্ষ্যে রেঞ্জটির আওতাধীন ১৩টি জেলা, ৪৩টি সার্কেল ও ৯৮টি থানায় কর্মরত সকল পুলিশ সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা রেঞ্জের অধীন তৎকালীন ঢাকা জেলার রাজারবাগ পুলিশ লাইন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অনন্য স্থান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের সদস্যবৃন্দ। তিনি রাজারবাগের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে জীবন-উৎসর্গকারী সকল পুলিশ সদস্যের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীনতম পুলিশী সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ। ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ১৭৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- ‘আমাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল কয়েকজন বন্দুকধারী পুলিশ, একজন হাবিলদার, আর তাদের সাথে আছেন দুইজন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মচারী, একজন দারোগা আর একজন বোধহয় তার আর্দালি বা বডিগার্ড হবে। আমরা শেষ রাতে গোপালগঞ্জ পৌঁছালাম। আমাকে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হলো। পুলিশ লাইন থেকে আমার গোপালগঞ্জের বাড়িও খুবই কাছাকাছি। …আমার মনও খারাপ, আর ক্লান্তও ছিলাম। একটা খাট আমাকে ছেড়ে দিলো। খুব যতœ করল। তাড়াতাড়ি আমার বিছানাটাও করে দিলো। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। টুঙ্গিপাড়া থেকে ধানমন্ডি-৩২ সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমার ও আমার পরিবারের আনন্দ-বেদনার অম্লান স্মৃতিও ধারণ করে আছে এই ঢাকা রেঞ্জ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে জাতির পিতা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পুনর্গঠন ও উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ পুলিশের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি, ঝুঁকিভাতা চালু, রেশন প্রাপ্তির হার দ্বিগুণ এবং প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করি। ১৯৯৮ সালে আমরাই প্রথম পুলিশ সুপার পদে একজন নারী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেই। ৫ কোটি টাকা সিড মানি দিয়ে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, পুলিশ স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠা, পুলিশের জনবল বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করি।’

‘বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আমরা ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদমর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন পদ সৃষ্টি এবং বিভিন্ন স্তরে বিপুল সংখ্যক পদোন্নতি প্রদানসহ গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ‘আমরা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এন্টি টেরোরিজম, কাউন্টার টেরোরিজম, নৌ পুলিশ, এমআরটি পুলিশ ও এসপিবিএনসহ অনেকগুলো নতুন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছি।’ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্বত্য জেলাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় কয়েকটি ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হয়েছে। ‘আমরা পুলিশ স্টাফ কলেজকে আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করেছি। আমরা থানা, ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্র, ব্যারাক, আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দিয়েছি। দশ তলা ভবন করে রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করেছি। আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। পুলিশ বাহিনীর জন্য ডিএনএ ল্যাব, ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এফআইএস) ও আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করেছি। আকাশপথে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পুলিশের এয়ার উইং গঠন করা হয়েছে।

Nagad

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের এসকল সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে পুলিশ বাহিনী আজ একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ, গতিশীল ও জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি সদস্য মানবীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে সততা, নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, ত্যাগ, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে যেকোনো চ্যালেঞ্জ সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করে উন্নততর পুলিশী সেবা প্রদান করবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে সক্ষম হব।’

প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা রেঞ্জের ১১০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।