ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে বন্যা

সিলেট সংবাদদাতা:সিলেট সংবাদদাতা:
প্রকাশিত: ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৪

ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। সংগৃহীত ছবি

ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা দিয়ে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮ উপজেলার অন্তত তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। রাতেও অব্যাহত রয়েছে নদীর পানি বৃদ্ধি।

গত মঙ্গলবার থেকে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নেয় জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। আকস্মিক বন্যায় হতবিহ্বল পরিবারের নারী-শিশুদের আজ দিনভর আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে দেখা যায়। তবে ঢল কমে আসায় পানিবন্দী ভিটায় রয়ে গেছেন পুরুষ সদস্যরা। জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার পানিবন্দী অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পারছেন না নৌকার অভাবে।

জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে প্লাবিত হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিতে ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদীর পানি আগে বিপৎসীমার ওপরে ছিল। সেই সঙ্গে রাতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নামা ঢলে সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্য নদীর পানি দ্রুতই বৃদ্ধি পায়। তলিয়ে যেতে থাকে গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল।

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, উপজেলার টিলা এলাকা ছাড়া বাকিসব এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। রাতে অন্ধকার ও প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযানে সমস্যা হচ্ছিল। ভোর থেকে ব্যাপকভাবে উদ্ধার অভিযান চলছে। মানুষ উদ্ধার করা গেলেও গৃহপালিত পশুপাখির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Nagad

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। জাফলং-বিছনাকান্দিসহ সব পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। বন্যার পূর্বাভাস থাকায় আমরা আগেই ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ছিল। রাতেই ১৬৭টি পরিবার আশ্রয় নেয়, ৩৫০ ছাড়িয়েছে।’

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি খারাপ। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রয়োজনে তারাও উদ্ধার অভিযানে যোগ দেবে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যাকবলিত লোকজনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০০ বস্তা করে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে।

এদিকে নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়া ও বন্যার কারণে সিলেট জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বুধ ও বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়।

এদিকে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে-ও। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন।