শপথ নিলেন বেসিসের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি, প্রযুক্তিতে করারোপ হচ্ছে না
আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ২০২৪-২০২৬-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি । আজ সোমবার (২০ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বেসিসের এই অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদকে শপথবাক্য পাঠ করান বেসিসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ তৌহিদ।
অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন-আগামী বাজেটেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকতে পারে। তবে এবারের বাজেট ঘোষণায়, কোন অর্থবছর থেকে এ খাতে কর বসবে তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। এমনটাই আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাথে।


তিনি বলেন- প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারতো এইখাতে সারাজীবন কর অব্যহতি দিতে পারে না। সেখানে আমি তাকে বলেছি, হঠাৎ করে এভাবে এই সুবিধা উঠিয়ে নিলে ব্যবসায়ীদের সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। তার চাইতে ঘোষণা দিয়ে কবে থেকে এই কর ধার্য করা হতে পারে সেটা আমরা জানিয়ে দিতে পারি। পর্যায়ক্রমে এই খাতের ট্যাক্স বাড়ানো যেতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন- যেভাবে যে গতিতে প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে সে জন্য কী ধরণের পলিসি সাপোর্ট দরকার সে বিষয়ে আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। ট্যাক্স ইমপর্টান্ট হলেও আপনাদের নেক্সট লেভেলের জন্য কী ধরণের নীতি দরকার যে জন্য পরামর্শ দিতে হবে। এআই, ব্লক চেইন, বিগডাটাতে নজর দিতে হবে। কেননা, আগামীতে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারাবে প্রোগ্রামার। তাই তাদের এখন নেক্সট লেভেলের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বেসিস থেকে এ বিষয়ে সরকারকে গাইড করতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। তিনি বলেন-ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গত ১৫ বছরে বেসিস-ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তিন লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, দুই হাজার ৪০০ সফল উদ্যোক্তা তৈরি করেছে, তার জন্য বেসিসের প্রতি, বেসিসের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
এ সময় তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানের দুই পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান নগদ ও শেয়ারট্রিপ-কে উদাহরণ হিসেবে টেনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আইসিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কর অবকাশ সুবিধা আরো ৫ বছর বাড়ানো অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, আগামী ৩০ জুন আইসিটি খাতে কর্পোরেট ট্যাক্স হলিডের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি আর ৫টি বছর, ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো যায়, তাহলে সফটওয়্যার খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি এখানে বিনিয়োগ বাড়াতে আমরা স্টার্টআপ বাংলাদেশে আরো ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য চেয়েছি। আমার বিশ্বাস আগামী ৫ বছরের মধ্যে স্টার্টআপ বাংলাদেশ থেকে আমাদের আইটি-আইটিইএস খাতে আরো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টে সুযোগ তৈরি করতে পারবো।
বাণিজ্য মন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুরোপুরি পেপারলেস হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় হবে-পুরোপুরি পেপারলেস। অর্থাৎ একটি কোম্পানি খুলতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেই ঘরে বসেই সব সনদ পাওয়া যাবে।
বেসিস নিয়ে তিনি বলেন-আমাদের এই ডিজিটাল বাংলাদেশে যেখানে নারীর ক্ষমতায়নে রোল মডেল সেখানে কিন্তু আমরা নারী উদ্যোক্তা থাকলেও ভালো হবে। কিন্তু এবারের কার্যনির্বাহী কমিটিতে নেই। একজনকেও দেখিনি। আইন পরিবর্তন করে হলেও এই ১১ জনের দলে আগামীতে অন্তত ৩ ভাগের ১ ভাগ নারী প্রতিনিধি উদ্যোক্তা থাকা উচিত।
এসময় বিভিন্ন দেশে মার্কেট অ্যাকসেস নিতে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও ই-কমার্সের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বিজনেস টুলস স্পেসিফিকেশন ডোমেইন এক্সপার্ট বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মোঃ মাহবুবুল আলম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বেসিসের সাবেক সভাপতি সরওয়ার আলম, রফিকুল ইসলাম রাউলি, এ কে এম ফাহিম মাশরুরসহ বিদায়ী কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, বেসিসের সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, বেসিসের সদস্য কোম্পানির প্রতিনিধিবৃন্দ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহণ করেন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, সহ-সভাপতি (প্রশাসন) সৈয়দ মোহাম্মাদ কামাল, সহ-সভাপতি (অর্থ) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, বেসিসের নবনির্বাচিত পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, দিদারুল আলম, এম আসিফ রহমান, ড. মুহম্মদ রিসালাত সিদ্দীক, মীর শাহরুখ ইসলাম, বিপ্লব ঘোষ রাহুল এবং সৈয়দ আব্দুল্লাহ জায়েদ।
রাসেল টি আহমেদ বেসিসের সভাপতি হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অনুষ্ঠানে বিদায়ী জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা/সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান তার হাতে বেসিসের পতাকা তুলে দেন। পরবর্তীতে বিদায়ী কার্যনির্বাহী পরিষদ, বেসিস নির্বাচন বোর্ড ও আপীল বোর্ডকে তাদের অবদানের জন্য শুভেচ্ছা ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বেসিসি সভাপতি সুব্রত সরকার, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, ইক্যাব সভাপতি শমী কায়সার প্রমুখ অনুষ্ঠানে নতুন কমিটিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেসিসের বিদায়ী জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা। বক্তব্যে কর অব্যাহতি এই কমিটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে রাজধানীর বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশেন, গুলশানে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন বেসিসের ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে রাসেল টি আহমেদ নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘ওয়ান টিম’ ১১টি পদের মধ্যে ৮টিতে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘টিম স্মার্ট’ পেয়েছে ৩টি পদ।
সারাদিন. ২১ মে. এসআর