ঝিনাইদহের “বালিশ মিষ্টি”র যশ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে
বালিশ মিষ্টি । নাম শুনেই মনের ভেতর কেমন একটা খটকা লাগছে । কিন্তু বাস্তবতা একদমই সত্যি । কারিগর নিজেই এ মিষ্টির নাম করণ করেছেন । নামের সার্থকতার সাথে মিলিয়ে দেখতে গেলে মিলবে এক বিশালাকার, ব্যতিক্রমী ও সুস্বাদু এ মিষ্টি । বিস্ময়কর-ভাবে একেকটির ওজন এক কেজি । ঝিনাইদহের অজ-পাড়াগাঁয়ের এ মিষ্টির সুখ্যাতি জেলায় ছড়িয়েছে বহু আগেই । এখন এ আলাদা ধরনের মিষ্টির যশ ছড়িয়ে পড়ছে বিদেশে ।
জানা যায়, জেলা শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুরের ভৈরবা বাজার । বাজারটি বসে সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার । দুপুর ২টার পর থেকে জমতে থাকে বাজার । বিকিকিনি চলে গভীর রাত পর্যন্ত । এ বাজারে গত ৩৫ বছর মিষ্টি বিক্রি করেন হযরত আলী । তার নিজে হাতে তৈরী বালিশ মিষ্টি কিনতে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে । বিশাল-বিশাল গামলায় কয়েকধরণের মিষ্টি বিক্রি করেন হযরত । তবে একটিতে থাকে ১ কেজি ওজনের ভিন্নধর্মী বালিশ মিষ্টি । আর অন্যগুলোয় চলে রসগোল্লা, চমচমসহ অন্যান্য মিষ্টি । বাজারে মিষ্টির দোকান বশে কয়েকটি থাকলেও তার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে । ব্যতিক্রমী, সুস্বাদু এ মিষ্টি শুধু কেনা নয়, কিছু ক্রেতা এ মিষ্টি অনস্পট কিনে খান ।


ঝিনাইদহ শহরের রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে একটি কাজে এসেছিলাম । কাজ শেষ করে বাজারে এসে ব্যতিক্রমী এ মিষ্টি পেয়ে গেলাম । ২ কেজি ওজনের বালিশ মিষ্টি বাড়ীর জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছি ।
বাজারের আরেক দোকানদার রহমত মিয়া জানান, ১৯৭১ সাল থেকেই হযরত আলীর পিতা আজিজুল ইসলাম এ বাজারে মিষ্টি বিক্রি শুরু করেন । তার বাড়ী ঝিনাইদহের মহেশপুরের সামান্তা কুটিপাড়া গ্রামে । তার মিষ্টির সুনাম এখন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ।
মূল কারিগর হযরত আলী জানান, নিজের থেকেই তিনি এ মিষ্টি তৈরি করেছেন । মানুষের মাঝে দিন দিন চাহিদা বাড়ায় তিনি এ মিষ্টি তৈরি করে যেতে চান । তিনি বলেন, ৩ ধরনের বালিশ মিষ্টি তৈরি করেন । আধা কেজি, ১ কেজি ও দেড় কেজি এবং দুকেজি । এ বাজারেও রকমভেদে তিনি ২৭ কেজি বালিশ মিষ্টি এনেছেন । কোন কেমিক্যাল ব্যবহৃত না হওয়ায় চাহিদা ব্যাপক । কখনই কোন মিষ্টি থাকে না তার । প্রতিবাজারে তার বিক্রি প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকা । উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেন ময়দা, চিনি,গরুর খাটি দুধ ও ছানা। দাম ৩০০ ও ৬০০ টাকা । এ মিষ্টির জেলা ব্যাপী সুখ্যাতি ছড়িয়েছে বহু আগেই । গত কয়েকবছর দেশের গণ্ডি মিষ্টি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে । আগত প্রবাসীরা যখন আবার ফিরে যান তখন তারা আলাদাভাবে অর্ডার দিয়ে মিষ্টি কিনে নিয়ে যান । মিষ্টির মান ভালো হওয়ায় তা কমপক্ষে ৫-৭ দিন রেখে খাওয়া যায় ।