স্মার্ট বাজার সিস্টেম চালু করতে চান নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪

বছরের শুরু থেকে স্মার্ট বাজার সিস্টেম চালু করতে চান বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা, আমদানিকারকদের থেকে ভোক্তা এর মধ্যে যেন কোনো হস্তক্ষেপ না থাকে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করব।

তিনি বলেন, আমরা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্মার্ট বাজার সিস্টেম করতে চাই। সরবরাহের সময়টা কমিয়ে আনতে চাই। বাণিজ্য, অর্থ, কৃষি, খাদ্য ও শিল্প মন্ত্রণায়ের সমন্বয়ে একটি টিম থাকবে। এটা কোনো চিঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করব, এটাই আমাদের মিরাকল। আর আমরা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করব। আগামী জুন মাসে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এটা অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে সচিবালয়ে প্রথম কর্ম দিবসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবেও বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সবসময় একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। ইউক্রেন-রাশিয়া ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বাজার ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়েছে। যার প্রভাব আমাদের বাজারেও পড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই অসৎ ব্যবসায়ীদের প্রতি হুঁশিয়ার উচ্চারণ করলেন প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, দেশে কোনও সিন্ডিকেট আছে, এটা আমি মনে করি না। আমি সিন্ডিকেট শব্দের সঙ্গে অভ্যস্ত নই। তবে, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে বিভিন্ন পণ্য মজুত করে অতিরিক্ত মুনাফা করেন। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটা বন্ধ করতে যা যা প্রয়োজন করা হবে। কোনও কারসাজি করে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Nagad

তিনি বলেন, আমরা চাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করতে। যাতে সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। আমরা এ বছর থেকে ‘স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা’ চালু করতে চাই। যাতে উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা, আমদানিকারকদের থেকে ভোক্তা, এর মধ্যে যেন কোনও হস্তক্ষেপ না থাকে। আপনারা জানেন, অনেক পণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের কাজ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা। আর সেটা আমরা করবো, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারি।

এক কোটি পরিবারকে কবে নাগাদ টিসিবির স্মার্ট কার্ড দিতে পারবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিসিবির যে এক কোটি পরিবার রয়েছে তাদের তথ্য নিয়েছি, সেটা যাচাই-বাছাই চলছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই হয়ে গেছে সেগুলোর কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে। আশা করছি, জুনের মধ্যে কার্ড দিতে পারবো। তার জন্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না। এখন যে তালিকা আছে, সেটা ধরেই দেব।

প্রতিমন্ত্রী টিটু বলেন, যারা বাজারে উৎপাদক, আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে যারা কোনো রকমের হস্তক্ষেপ করবে, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। যারা কৃত্রিম সংকট, মজুতদারি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে, যারা ভালোভাবে ব্যবসা করবে তাদের সহযোগিতা করবো। তাদের আস্থায় নিয়ে কাজ করতে চাই।

ভারত থেকে আমাদের পণ্য আমদানি করতে হয়, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের সুবিধামত পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব পণ্য ভারতে থেকে আসে সেগুলো আমদানিতে একটু সহজ করা হবে বলে করছি। একইসঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাব।

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি সিন্ডিকেট শব্দের সঙ্গে অভ্যস্ত নই। দেশে কোনও সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। আমি পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করেছি। তখন কোনও সিন্ডিকেট, মজুতদার কোনও কারসাজি করতে পারে নাই। এখানেও আমরা সফল হবো। ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে কাজ করতে হবে। আমাদের যথেষ্ট সুযোগ আছে। তাদের অনুরোধ করবো, তাদের নিয়ে বসবো। আমরা তাদের বলবো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সঙ্গে ব্যবসা করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। কিন্তু কোনো রকম কারসাজি করে, সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করা হলে তা শক্তহাতে প্রতিরোধ করা হবে। এ বিষয়ে আমি সাংবাদিকদের সহায়তা আশা করছি। কারণ, আপনারা আমাদের চোখ ও কান।

তিনি বলেন, কোনো ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়, জনস্বার্থে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে কাজ দিয়েছেন। সেটা আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে পালন করবো। ভোক্তাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমাকে একটু সময় দেন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। এদেশে যারা ব্যবসা করেন সবাই দেশপ্রেমিক। আমরা বিশ্বাস করিম তারা মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। আমাদের দায়িত্ব থাকবে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা। বিশেষ করে যারা আমাদের নিত্যপণ্য নিয়ে কাজ করেন। তেল, চিনি, লবণ- এ ধরনের পণ্য নিয়ে যারা কাজ করে তারা যেন স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করেন এটা আমরা নিশ্চিত করব।

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, কৃষিতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিতে আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছি। চাল, ভেজিটেবল, মাছ, ডিম, মুরগি কোনকিছুতে আমাদের ঘাটতি নেই। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনাটা, স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা করতে চাই। উৎপাদক বা আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহের সময় কমিয়ে আনতে চাই। সরবরাহ যদি ভালো থাকে তাহলে কেউ বাজারে কারসাজি করার সুযোগ পাবে না এবং কেউ উচ্চমূল্যে বিক্রি করারও সুযোগ পাবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা রপ্তানিকে বৈচিত্র্যময় করতে চাই। আমরা গার্মেন্টসের ওপর অনেক নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী কাল আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন গার্মেন্টসের মতো একই রকম সুযোগ-সুবিধা চামড়া ও পাট শিল্পে দেওয়া হবে। ওখানে আমাদের ভ্যালু এডিশন অনেক বেশি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোন কিছু উৎপাদন করে না, আমদানিও করে না। বাজার ব্যবস্থাটাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে, ভোক্তা যাতে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিত করা হলো আমাদের কাজ।

তিনি বলেন, কেউ কারসাজি করার চেষ্টা করলে আমরা শক্তহাতে দমন করব। বিশেষ করে মজুতদারি। আমরা দেখি, রমজান আসলেই কিছু ব্যবসায়ী, আমি ব্যবসায়ী বলবো না, তাদের অসাধু কিছু গোষ্ঠী; তারা ব্যবসার নামে এই অপকর্মগুলো করে আসছে। মজুতদারিকে আমরা শক্তহাতে দমন করব। আমাদের সব ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে সচেতন থাকবে।