ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন নীতিগত অনুমোদন, গঠিত হচ্ছে বোর্ড
ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষায় একটি বোর্ড গঠনের বিধান রেখে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ আইনটি উপস্থাপন করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।


তিনি বলেন, ‘তথ্য এখন সবচেয়ে বড় রিসোর্স। এই ডিজিটাল যুগে তথ্য ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কৌশলগত রিসোর্স হিসেবে পরিগণিত হয়। তথ্যটাই হলো এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। সেক্ষেত্রে যাতে তথ্য ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা কিংবা একজন ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির গোপনীয়তা, ব্যক্তি স্বতন্ত্র এবং তার সম্মতির প্রয়োজন হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে। সেই বোর্ড এই ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘উপাত্ত যারা সংগ্রহ করবেন তাদের জন্য অনুসরণীয় কিছু নীতিমালা থাকবে কিছু বিধি-বিধান থাকবে। কিবোর্ড বিধি-বিধান তৈরি করবে এবং সেই বিধি-বিধানের আলোকে সবার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং তথ্য বিতরণ করতে হবে।’
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘যারা তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করবেন, তাদের বোর্ডের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধনের ভিত্তিতে তারা এ কাজগুলো করতে পারবেন। সেই বিধান রেখে এই আইনটি করা হচ্ছে।’
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর আইসিটি বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষে সরকারি, বেসরকারি সব শিল্প কারখানার প্রক্রিয়া ও উদ্ভাবনী তথ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা প্রয়োজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩’-এর খসড়া প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ খসড়া আইনের বিষয়ে গত ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। পরবর্তীতে একাধিক সভা, কর্মশালা, ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩’-এর খসড়া পরিমার্জনপূর্বক চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাভাষা বাস্তবায়ন কোষে (বাবাকো)’ প্রমিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে অংশীজনদের মতবিনিময়ের মাধ্যমে আইনটির খসড়া পুনরায় পরিমার্জন করা হয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটি’খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভা-বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে।
এ আইনটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাবলি তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণের জন্য বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা স্থাপন নিশ্চিত করা; কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, ব্যবহার বা পুনঃব্যবহার, হস্তান্তর, প্রকাশ, বিনষ্টকরণ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধান করা; জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উপাত্তের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে কোনো ব্যক্তির উপাত্ত সুরক্ষা ও তার প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উপাত্ত সুরক্ষার নীতিগুলো অনুসরণক্রমে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার ও বিস্তৃতি ঘটানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উপাত্তের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
আইসিটি বিভাগ জানায়, দেশের নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো দেশের সঙ্গে পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের উপাত্ত সুরক্ষা আইন- ২০২৩ আইনটি করা হয়েছে।