বিএনপি-জামায়াত থেকে জনগণকে সাবধান থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে জনগণকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো মানুষের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে না। বিভিন্ন জায়গায় জীবন্ত মানুষগুলোকে ওই বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করছে। গাড়িঘোড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করা এটাই তাদের কাজ। আমরা উন্নয়ন করি, আমরা সৃষ্টি করি, ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে জনগণের কল্যাণ করতে জানে না। কাজেই ওদের কাছ থেকে জনগণকে সাবধান থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাঠে মহেশখালী আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।


‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং মানুষের জন্য কাজ করে,’ উল্লেখ করে বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর অন্য একটি দল আছে এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। এরা খুন, হত্যা, বোমাবাজী, গ্রেনেড হামলা, অর্থপাচার, অস্ত্র চোরাকারবারী-এগুলোই জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে জানে না।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে তাঁর সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে তা নবীন প্রজন্মেও অনেকেই বুঝবে না কারণ তারা দেখেনি, কোন দুরাবস্থা থেকে বাংলাদেশ আজকের সম্মানজনক অবন্থানে এসেছে। আজকে বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক দেশ, কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন বলেই আমরা ক্ষমতায় আছি।
তিনি বলেন, আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনেও আমি চাইব নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আপনাদের সেবা করার ও যেসব কাজ অসমপ্ত রয়েছে সেগুলো শেষ করার সুযোগ দেবেন।
“আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন?” প্রধানমন্ত্রীর এ প্রশ্নের উত্তরে উপস্থিত জনসমুদ্র সমস্বরে দুই হাত তুলে সমস্বরে সম্মতি জানায়। দূর দূরান্ত ও প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চল থেকে নৌকা, ট্রলার বা পায়ে হেঁটে কষ্ট করে তাঁর জনসভায় যোগ দেয়ায় উপস্থিত জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সাম্প্রতিক মক্কা-মদীনা সফরের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে যেন আর কষ্ট করতে না হয় তারা যেন সুন্দর জীবন পায় সেজন্য সেখানে তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেছেন।
দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশে রেখে গিয়েছিলেন। তার আদর্শ বুকে নিয়ে ও পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়শীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছি। সেটা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকেই জয়ী করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছে। আমাদের হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। শুধু একটাই কাজ, বাংলাদেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, বাংলাদেশের মানুষ যেন উন্নত থাকে, যেভাবে আমার বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন- ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সেই বাংলাদেশই আমি গড়তে চাই। আমার বাবার স্বপ্নটাই আমি পূরণ করতে চাই।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশার সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াশিকা আয়শা খান, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মাতারবাড়ীতে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার অন্য তিনটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে সকালে তিনি ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ও আইকনিক ঝিনুক আকৃতির কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের উদ্বোধন করেন।