জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে মোংলার ৫’শ পরিবার
বর্ষা মৌসুম এলেই যেন দুর্ভোগের আর শেষ থাকেনা আরাজীমাকড়ঢোন এলাকার শতশত বাসিন্দাদের। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মেছেরশাহ সড়কের দুইপাশ ও এ সড়কের চারটি সংযোগ ইট সোলিংয়ের রাস্তার ৫’শ পরিবার পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রাস্তায় পানি, বাড়িঘরেও পানি। ঘরে পানি উঠায় রান্নাবান্না বন্ধ এসব পরিবারের। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরই শুধু তলায়নি, পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে মাছও। বাড়ী লোকজনের ঘরে থাকাই যেন দায় হয়ে পড়েছে। রাস্তার পানি পেরিয়ে শিক্ষার্থী যেমন স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, তেমনি এলাকার লোকজন বাজার ও মসজিদে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।


এছাড়া এ সড়ক দিয়ে চলাচলে পানি ডুবে অটোভ্যান, সাইকেল-মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও টমটমের মটরসহ নানা ধরণের ক্ষতি হচ্ছে। কয়েকজনের অটোভ্যান ও ইজিবাইকের মটর ডুবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের গাড়ী ফেলে রেখে বেকার জীবনযাপন করছেন।
ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুন নেছা বলেন, রাস্তাগুলোতে হাটু পানি, পুরুষেরা কাপড় উঠিয়ে/উঁচিয়ে যাতায়াত করতে পারলেও নারী ও শিশুদের ভিজে যেতে হচ্ছে। বাড়িঘরেও হাঁটু পানি, আমাদের রান্নাবান্নাও বন্ধ, বাঁচার মত কোন কায়দা নেই। আমাদের এলাকার কোথাও কোন ড্রেন নেই, তাই আমরা ডুবে মরি।
একই এলাকার বাসিন্দা ইস্রাফিল শেখ বলেন, আমার বাড়ীর মধ্যে এক হাত পানি, পানি নামার কোন ব্যবস্থা নেই। পুরো বর্ষা মৌসুমই আমাদের ডুবে থাকতে হয়, কেউ কোন প্রতিকারও করছেন না।
অশোক মণ্ডল ও ইমাম হোসেন বলেন, ঘরে ও রান্নাঘরের চুলায় পানি। রান্না করতে হচ্ছে খাটের উপর, আমরা আর এ পানির সমস্যা সহ্য করতে পারছিনা। ছেলে-মেয়েদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। বাড়ী পোশা গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগিও রাখার জায়গা টুকু নেই, সব পানিতে তলানো।
পারভেজ খান বলেন, আমার দুইটি পুকুরে মাছ ছাড়া ছিলো, বৃষ্টি তলিয়ে সব মাছ বেরিয়ে গেছে। এতে আমার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর জলাবদ্ধতায় ঘরবাড়ীও নষ্ট হচ্ছে। টানা ৪মাস ধরে এমন পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি আমরা। এসব দেখার যেন কেউ নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
ইজিবাইক চালক মোঃ মিলন বলেন, পানি ডুবে গাড়ীর মটর ও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে, ৪০/৫০হাজার টাকা লাগবে ঠিক করতে। এতো টাকা একসাথে পাবো কোথায়, গাড়ী সারাতেও পারছিনা, না পারছি চালাতেও। তাই এক রকম না খেয়ে দিন যাচ্ছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পৌর শহরের আরাজীমাকড়ঢোনের মত একই অবস্থা জয়বাংলা, শেলাবুনিয়া, খোচেরডাঙ্গা, মুন্সিপাড়া, মিয়াপাড়া, কুমারখালী, কবরস্থান, ছাড়াবাড়ী, কেওড়াতলা, বটতলা ও সিগনালটাওয়ার এলাকা জুড়েই।
অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও জলাবদ্ধতা সম্পর্কে পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান বলেন, সরকারী সকল রেকর্ডিয় খাল দখল করে রাখায় পানি নামতে না পারায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা তো রয়েছেই।
ফলে পৌরসভার প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ বাসিন্দাই জলাবদ্ধতায় ভুগছেন। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করছেন।