চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান নামিয়ে ভারতের ইতিহাস
চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোনও দেশ হিসেবে পা রাখলো ভারত। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদে অবতরণ করার মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করার ইতিহাস গড়ল ভারত।
বুধবার (২৩ আগস্ট ) ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় দেশটির চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ করতে শুরু করে। পরে ৬টা ৪মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ইতিহাস গড়ে চন্দ্রযান-৩। পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে ভারতীয়দের পাখির চোখ ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের সেই অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে।


এই একই অঞ্চলে রাশিয়ান একটি নভোযান বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েকদিন পর ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণ করল। এমন সাফল্যে এই অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোর ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে অবতরণের দৃশ্য। দেশটির লাখো মানুষ সাক্ষী হন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের।
চাঁদের মাটিতে বিক্রমের অবতরণের পরপরই ইসরোর পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বার্তা দেওয়া হয়। চন্দ্রযান-৩ এর পক্ষে ইসরোর সেই বার্তায় লেখা হয়েছে, ‘ভারত, আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি।’
এর ফলে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ওই এলাকায় মহাকাশযান অবতরণকারী প্রথম দেশের স্বীকৃতি পেল। সর্বশেষ চাঁদে অবতরণ প্রচেষ্টায় বিশ্বের জনবহুল দেশটির জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ এই সাফল্য দেশটিকে মহাকাশ গবেষণায় অগ্রসর বিশ্বের মুষ্টিমেয় দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যাবে।
ভারত ইতিহাস গড়ার সাথে সাথে বেঙ্গালুরুতে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর কন্ট্রোল রুমে তুমুল করতালিতে মেতে ওঠেন বিজ্ঞানীরা।
এমন সাফল্যে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার সাবেক প্রধান কে সিভান বলেন, ‘ল্যান্ডারের ক্যামেরায় তোলা সাম্প্রতিক পাঠানো প্রতিটি ছবি ইঙ্গিত দিয়েছিল, এই অভিযানের চূড়ান্ত পর্বটি সফল হবে। আমরা কোনো সমস্যা ছাড়াই ল্যান্ডিং মিশনটি সফল করতে পেরেছি।’
সিভান আরও বলেন, ‘ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) চার বছর আগের ব্যর্থতার পরে চন্দ্রযানের ত্রুটি সংশোধন করেছে। পূর্ববর্তী চন্দ্রযান তার নির্ধারিত অবতরণের মুহূর্তে মডিউলের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছিল। তবে এবার আমাদের আশা ছিল যে অবতরণ মসৃন হবে।’
ভারতের তুলনামূলকভাবে কম বাজেটের মহাকাশ কর্মসূচির অধীনে ২০০৮ সালে চাঁদের কক্ষপথে প্রথম একটি প্রোব পাঠায়। এরপর থেকে এটির আকার ও গতি যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ এ মিশনে ব্যয় হয়েছে ৭৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।