আজ পবিত্র হজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে প্রকম্পিত হবে আরাফাত

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২২ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২৩

আজ মঙ্গলবার (২৭জুন) মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পবিত্র হজ । প্রতি বছর ৯ জিলহজ সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কার আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ। এটি পবিত্র আরাফাত দিবস হিসেবেও পরিচিত।

এই দিনে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে লাখও কণ্ঠে মুখরিত মিনা প্রান্ত। এবারে হজে অংশ নেওয়া বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সমবেত হচ্ছেন তাবু শহর মিনায়। এদিনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ নামিরা থেকে হজের খুতবা ও নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালিত হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

এ বছর বিশ্বের ২০ লাখের বেশি হজযাত্রী সমবেত হচ্ছেন ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। কণ্ঠে তাঁদের সমস্বরে উচ্চারণ করা হচ্ছে—‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান্‌নি’মাতা লাকা ওয়াল্‌মুল্‌ক্‌, লা শারিকা লাকা’। এর বাংলা অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।

সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে হজযাত্রীরা আজ মঙ্গলবার মিনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই পবিত্র প্রান্তরে।

পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরের মিনা এখন যেন তাঁবুর শহর। যে দিকে চোখ যায়, তাঁবু আর তাঁবু। তাঁবুতে প্রত্যেকের জন্য আলাদা ফোম, বালিশ, কম্বল বরাদ্দ রয়েছে। ফোমের নিচে বালু। মিনায় অবস্থান করা হজের অংশ। হজযাত্রীরা নিজ নিজ তাঁবুতে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করে হজযাত্রীর আল্লাহর কাছে ইবাদত ও দোয়া প্রার্থনা করে তাবু শহর মিনায় অবস্থান করবেন।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়া বলেন, গত রোববার থেকে বিশ্বের লাখো মুসলিমের লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত মক্কা নগরীর মিনা। এ বছর ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী হজযাত্রীদের সেবা দেবেন। হজ পালনে আল্লাহর অতিথিদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার ও সৌদির জনগণ অংশ নেবে।

Nagad

পবিত্র স্থানগুলোতে পরিবহন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার মতো স্থানগুলো একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার জন্য থাকবে ট্রেন ও বাস। সব জায়গাতেই বিশেষ করে মিনায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হাজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা।

আল-রাবিয়া আরও জানান, তার মন্ত্রণালয় আল্লাহর অতিথিদের স্বস্তি নিশ্চিত করতে ও হজে একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। এ ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরেই পরিশ্রম করছে সৌদি সরকার।

নারী নিরাপত্তাকর্মীরা হাজিদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন বিতরণ ও হাজিদের হজের নিয়মকানুন শিখিয়ে দেবেন। আজ মঙ্গলবার সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরাফাত ময়দানের উদ্দেশে রওনা হবেন হাজিরা। আরাফাত ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন তারা। তারপর সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং রাতে সেখানেই অবস্থান করবেন। পথে শয়তানকে নিক্ষেপ করার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করবেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটাবেন এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন। মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।

জামারাত আল-আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করার পর হজযাত্রীরা পশু কোরবানি করবেন। এরপর তাওয়াফ আল-ইফাদাহ বা ফরজ তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে যাবেন। এই তাওয়াফ অবশ্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো সময় করতে পারবেন তারা। এ সময় তারা কাবা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করবেন এবং মাথা মুণ্ডন করবেন। একবার এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের আর ইহরামের নিয়মের মধ্যে আবদ্দ থাকতে হবে না। তারা সব হালাল (অনুমতিযোগ্য) কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন।

হজের অবশিষ্ট আচারগুলো সম্পন্ন করতে হজযাত্রীদের অবশ্যই আবার মিনায় ফিরে যেতে হবে। তাশরীকের দিনগুলোতে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হজযাত্রীদের মিনায় আরও দুটি কাজ করতে হবে। ১১ জিলহজ বিকেলে হজযাত্রীরা ২১টি ছোট পাথর সংগ্রহ করে তিন জামারাতে নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শুরু হয় জামারাত আল-উলা, তারপর জামারাত আল-উস্তা এবং পরে জামারাত আল-আকাবা দিয়ে শেষ হয়।

মক্কা থেকে যাত্রা করার আগে হজযাত্রীদের তাওয়াফ আল-বিদা করতে হবে, যা বিদায়ী তাওয়াফ নামেও পরিচিত। এটি হজ সম্পন্ন করায় অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং সব হজযাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০১৯ সালের পর এবারের হজে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করছে। ২০১৯ সালে আনুমানিক ২৫ লাখ মানুষ হজে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার ব্যক্তিকে হজে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫৯ হাজার। সৌদি কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে মোট আট লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৩ জন হজ করতে পেরেছিলেন। সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর ২০ লাখ হজযাত্রীকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।

হজের এ বিশাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রশাসনিক প্রতিনিধিদল সৌদি আরব পৌঁছেছেন অনেক আগেই। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার জন্য এসেছে চিকিৎসক দল।

উল্লেখ্য, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে মক্কা ও মদিনা এপর্যন্ত ২৬ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।তাদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী রয়েছেন।