ভান্ডারিয়ায় আ. লীগ অফিসে জেপির হামলার অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর

ভান্ডারিয়া সংবাদদাতা:ভান্ডারিয়া সংবাদদাতা:
প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২৩

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো: মিরাজুল ইসলামের বাস ভবন ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় হামলার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টি জেপি (মঞ্জু)র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত আটটার দিকে উপজেলার ওভার ব্রিজ সংলগ্ন ও থানার পাশে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর ও ছাত্রলীগ নেতাদের তিনটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ চালায় উপজেলা জাতীয় পার্টি জেপি (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল, যুব সংহতি (জেপি) সভাপতি রিজভি জমাদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক মামুন সরদারের নেতৃত্বে প্রায় ৫০/৬০ জন যুবক।

এসময় হামলাকারীরা কার্যালয়ের ভিতরে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে নিচে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা এসময় হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া ছাত্রলীগের তিনটি মোটর সাইকেল। এতে ১৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়ে ভান্ডারিয়া ও আশপাশের উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই রাত আটটার দিকে ৫০/৬০ জন যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র রামদা, কিরিচ, দা হাতে নিয়ে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নামে শ্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে সব ভাংচুর শুরু করে। অফিসে থাকা ছাত্রলীগ নেতা কর্মী ও স্থানীয়রা তাদেরও নিবৃত্ত করতে গেলে তাদেরকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে আতিকুল ইসলাম উজ্জল, রিজভি জমাদ্দার ও মামুন সরদারের লোকজন। এসময় তারা অফিসের দেয়ালে টানানো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টেনে নিচে ফেলে ভাঙচুর করে।

এরপর হামলাকারীরা রাত পৌনে নয়টার দিকে কলেজ রোডে ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিজ বাসভবনের বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর করে চলে যায়।

এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরের পর তেলিখালীতে একটি ইফতার অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় পার্টি (জেপি) দলীয় নেতা-কর্মীরা ভান্ডারিয়ায় ফেরার পথে স্থানীয় ছাত্রলীগের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মুলত জেপি নেতারা বিএনপি নেতার বাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে আজেবাজে মন্ত্রব্য ও কটুক্তি করায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আর তাতেই জেপি নেতাকর্মীরা প্রথম দফায় তেলিখালি বসে ছাত্রলীগের ওপর হামলা করে। এর কিছু সময় পরে ভান্ডারিয়া জেপি (মঞ্জু) এর দলীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিতীয় দফায় দেশীয় নানা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং লুটপাট করে। পরে একই সন্ত্রাসীরা তার বহুতল ভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করতে চাইলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালায় এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ তার।

Nagad

তেলিখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম তালুকদার মাসুম জানায়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল “বিএনপি” মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মির্জা গোলাম কিবরিয়া রিপনের নেতৃত্বে তার জুনিয়া গ্রামের বাড়ির সামনে সোমবার আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভান্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি জেপির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ইফতার মাহফিলে বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম কটুক্তি করেন। এ নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ জেপির নেতৃবৃন্দের সাথে তর্ক বির্তকের এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের কর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। উভয় পক্ষের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাংচুর হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ যুবলীগের ৩ জন আহত হয়েছে।

হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, ভান্ডারিয়া জাতীয় পার্টি- জেপি (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল জানান, তেলিখালী ইউনিয়নে একটি ইফতার অনুষ্ঠানে গেলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তাদের কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে এবং হামলায় তাদের ৩ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও সাধারণ সম্পাদকের বাসায় হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকেই ভান্ডারিয়া বাজারে বিক্ষোভ ও গণমিছিল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী।

ভান্ডারিয়া থানার ওসি মো: আসিকুজ্জামান জানান, তেলীখালী এলাকায় একটি ইফতার পার্টি শেষে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও জেপি(মঞ্জু) গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন আছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( মঠবাড়িয়া সার্কেল) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। দু’পক্ষের লোকই আহত হয়েছে।

বিএনপি নেতা মির্জা গোলাম কিবরিয়া রিপনের বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া ও পিরোজপুর সদর থানায় একাধিক নাশকতার মামলা রয়েছে।