সংগীতেই থাকতে চাই, সংগীতের সকল শাখায় বিচরণ করতে চাই: খায়রুল ওয়াসী
বর্তমান সময়ের আলোচিত তরুণ কন্ঠশিল্পী খায়রুল ওয়াসী। মেগাস্টার শাকিব খানের বরবাদ সিনেমায় তার দুটি গান বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। একটি গান মহামায়া, অন্যটি জিন্দা। একটি নিজের সুর-সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন, অন্যটি খায়রুলের সুরে গেয়েছেন নোবেলম্যান। খায়রুল ওয়াসীর কণ্ঠে ‘জিন্দা’ শিরোনামের গানটির ইউটিউবে এখনও অপ্রকাশিত। সব কিছু নিয়ে আলোচিত এই শিল্পীর সাথে কথা বলেছেন-শাহজালাল রোহান।
সারাদিন ডট নিউজ: এখনকার সময়ে সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা হচ্ছে ‘বরবাদ’। মেহেদী হাসান হৃদয় ভাই অনেক সুন্দর করে এই মুভিটি তৈরি করেছেন। যেটি বিনোদন জগতে দারুণ সারা ফেলেছে। দেশে, দেশের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সারা ফেলেছে? কেমন লাগছে?


খায়রুল ওয়াসী: মহামায়া- গানটি এই গানটি আমার নিজের সুর করা। সংগীত করেছেন আমজাদ ভাই। গানটির কথা সোমেশ্বর অলি ভাই। দারুণ লিখেছেন। আর সিনেমার একদম শেষ পর্যায়ে একটি গান রয়েছে জিন্দা। যেটির কথা সোমেশ্বর অলি ভাইয়ের। সুর-সংগীত আমার নিজেরই করা। আমি নিজেই গিয়েছি, এই গানটি এখনো রিলিজ হয়নি। টোটাল ছয়টি গান এই সিনেমাতে। যার পাঁচটি আমরা পেয়েছি। সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলেছে-মহামায়া। ফেসবুক , রিলস, ইউটিউব টিক টক সব প্লাটফর্মেই শুধু মহামায়া -মহামায়া। শেষে অডিও আকারে যখন গানটি দেওয়া হলো ট্রেন্ডিংয়ে চলে আসলো দুদিনের মধ্যেই। এরপরে ভিডিও দেওয়ার পরেও দারুণ সাড়া ফেলেছে। এত বড় কমার্শিয়াল বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করা, আমি ছোট হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। মেগাস্টার শাকিব খানের সিনেমায় আমার দুটি গান গাওয়া এটা আমার কাছে আসলে বিশাল ব্যাপার। সবার ভালোবাসা পেয়ে সত্যি ভালো লাগছে।
সারাদিন ডট নিউজ: যে গান দুটি সারা ফেলেছে, গানগুলি তৈরির প্রেক্ষাপটটা যদি শ্রোতাদের বলতেন, কিভাবে তৈরি করলেন?
খাইরুল ওয়াসী: সত্যি কথা বলতে প্রত্যেকটা গানই একটা গল্প। অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত এসব গানের দারুণ একটা গল্প থাকে। একদিন রাতে যখন পরিচালক হৃদয় ভাই, যখন আমাকে ফোন ফোন দিয়ে বলে হাতিরঝিলে চলে আসো। এই মেহেদী হাসান হৃদয় ভাইয়ের-ক্রাশ নাটকে ‘পারিসা’ নামের একটি গান আমার খুব জনপ্রিয় হয়। ভাইয়ের ডাকে চলে গেলাম। তখন তিনি খুব এক্সাইটেডভাবে আমাকে বলল সিনেমা করছি, নাম ‘বরবাদ’। গানগুলোর কথা আমাকে বলল। আসলে আমার নিজের প্রায় ২০-২৫টি সিনেমার গান আগেই, করা ছিল যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আমি শুনলাম হৃদয় ভাই সিলেক্ট করল। পরের দিন অফিসে যাওয়ার অফার করলো, তখন থেকে আমিও খুব এক্সাইটেড ছিলাম। বড় সিনেমা ‘বরবাদ’ যেখানে মেগাস্টার-শাকিব খান, ঈধিকা পল সবমিলিয়ে আমিও বেশ উত্তেজিত ছিলাম। যখন গল্প শুনেছি তখনই বুঝেছি বিগ বাজেটের দারুণ গল্পের ছবি। সত্যি কথা বলতে কি যেতে যেতেই- হৃদয় ভাই আমাকে সোমেশ্বর অলি ভাইয়ের লেখা গানটি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করে। তখনই গুনগুন করতে করতে যাই অফিসে যাই। চিন্তা করতে ছিলাম গল্প গান সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মজার কথা হলো- অধিকাংশ গান গল্প শুনেই আমি অনেক সময় লিখে ফেলি শুরু করে ফেলি -‘বরবাদ’ এর মহামায়া-বেলায়ও তাই হয়েছে। সবার সামনেই সুর করে ফেললাম। এরপর ডেমো তৈরি করলাম, এভাবেই তৈরি হয়ে গেল-সবার ‘মহামায়া’।

সারাদিন ডট নিউজ: দীর্ঘদিন ধরে আপনি গান করছেন, সুর করছেন, এই মুহূর্তে আসলে কোন বিষয়গুলো নিয়ে বেশি ব্যস্ত?
খাইরুল ওয়াসী: আরেকটি গানের জন্য আমি অপেক্ষা করছি যার নাম বরবাদ এরই-জিন্দা। গান সন্তানের মত। এটাকেও লালন করতে হয়। সব জায়গায় থেকে এরকম প্রশ্ন আমার কাছে আসছে-জিন্দা গানটা কবে আসবে। এই গানটি এমন দর্শক শ্রোতারা সিনেমার শেষে-কান্না করতে করতে হল থেকে বের হয়, হবে। গানটি সবার ভালো লাগবে। যারা বরবাদ দেখেছেন ছবি- শেষে বলতে পারবেন কি অবস্থা। মহামায়া যেহেতু নোবেলম্যান গেল, এরপরে আমি গেলাম। সুর সংগীত জমা দিলাম, সবাই বলল জাস্ট ওয়াও। এভাবেই তৈরি হয়-জিন্দা।
এখন নাটক, গান, নিজের ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেইজে নিজের গান, সব জায়গায় আমার নিজের কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছি। আরো ছয়টা সিনেমায় প্লেব্যাক করেছি যে আস্তে আস্তে আসছে। সর্বশেষ ভোকাল দিলাম ‘জামদানি’তে।
সারাদিন ডট নিউজ: আপনার জীবনে যদি টার্নিং পয়েন্ট যদি ধরি অর্থাৎ কোন গানগুলো র মাধ্যমে আপনার বেশি জনপ্রিয় এসেছে? আমি কি ‘পারিসা’ গানটি ধরতে পারি?
খায়রুল ওয়াসী: হ্যাঁ-আপনি ‘পারিসা’ গানটি ধরতে পারেন। ক্রাশ নাটকের একটি গান। যেটির নির্মাতা হচ্ছে বরবাদ সিনেমার পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয় ভাই। যারা গান ভালবাসে তাদের মধ্যে এমনভাবে পারিসা গানটি সাড়া ফেলেছে এখনো আমি কোথাও গাইতে গেলে পারিসা রিকোয়েস্ট আসে, নিয়মিত গাইতে হচ্ছে। তারপর যদি বলি -চোখ লাল কিসে গানটি। যেটি আমার লেখা ও সুর করা। গানটি শুনেননি এমন মানুষ খুব কম আছে। জীবনমুখী বাস্তব কথা দিয়ে গানটি লেখা। এরপরে ‘আমার আসি গানটি’ সেটাও সাড়া ফেলেছে। আরজে নাটকের গান এটা। যেটি নিয়মিত আমাকে গাইতে হয় স্টেজে, শোতে। ছোট মানুষ হিসেবে এই তিনটি গান আমার ক্যারিয়ারে ব্যাপকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। চেষ্টা করছি আরো ভালো কাজ করার জন্য। এরপর পরপরই চলে আসলো -বরবাদ মহামায়া।
সারাদিন ডট নিউজ: ফোক, নাকি আধুনিক গান কোনটি করতে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ফিল করেন?
খাইরুল ওয়াসী: ছায়ানটে লোক সংগীতে যখন আমি ভর্তি হই। আমার ভর্তি হওয়ার কথা ছিল নজরুল সংগীতে। পরে অসুস্থ ছিলাম গ্যাপ হয়ে যাবে, যার কারণে পরবর্তীতে ভর্তি হইলে-লোক সংগীতে। দীর্ঘ ছয় সাত বছর ওখানে তালিম নেওয়া, এরপরে লোকসংগীত এর শিক্ষক হিসেবে ছায়ানটেই যুক্ত হলাম। তখন আমি বুঝতে পারলাম যারা সুর নিয়ে কাজ করে তাদের সব ধরনের গান গাওয়ার প্রবণতা তৈরি করতে হয়। তারপরে অডিয়েন্স কোন গান শুনবে, শুনবে না সেটা তাদের ব্যাপার। মজার ব্যাপার হচ্ছে ‘পারিসা’, ‘আমিতো আমার তো আছি’ -এটি একটি আধুনিক টিউনের গান, মেলো রক- যখন এগুলো গাইলাম তখন শ্রোতারা খুব দারুণভাবে নিল। তারপর আবার ফোক নিয়ে যখন -চোখ লাল কিসে গানটি করলাম তখনো দর্শক স্রোতারা খুব দারুণভাবে নিল। তখন আমি বুঝতে পারলাম একটু আধুনিক, ফোক সবকিছু মিলিয়ে যদি আমি গান করি তাহলে খারাপ কিছু হবে না। এমনকি এই-মহামায়া নিয়ে আমাকে অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশ দেশের বাহিরে অনেকেই বলেছেন ওয়াসী ভাই ফাটিয়ে দিয়েছেন। মহামায়া- যে গানটি এটি একটি রক প্যাটার্নের গান। তারপরে আবার জিন্দা যেটা একদমই ফোক। সব মিলিয়ে আমি সংগীতেই থাকতে চাই। সংগীতের সকল শাখায় বিচরণ করতে চাই।
সারাদিন ডট নিউজ: উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লার সাথেও আপনি গান গেয়েছেন বিষয়টি আপনার কাছে কি স্বপ্নের মত মনে হয়নি?
খাইরুল ওয়াসী: ছোটবেলায় আমার মায়ের কাছেই আমার হাতে খড়ি গানের। তখন রেডিওতে যখন কানের কাছে নিয়ে মা গান শুনে, আমাকে শেখাতেন। তখন রুনা লায়লা ম্যাডামের যত গান আছে সব শুনতাম, এবং তখন থেকেই তার কণ্ঠের প্রেমে পড়েছি। তখন আমি ফোর ফাইভ-এ পড়ি। তখন আম্মুকে জিজ্ঞেস করতাম এত সুন্দর কণ্ঠ কিভাবে হয় মানুষের মা? তখন মা বলতেন ‘তুমি একদিন গান করবে’- রুনা লায়লা ম্যাডামের সাথে। আমি আসলে অবাক হয়ে যাই, এটা আমার ভাগ্যই বলবো তার সাথে গান গেয়েছি। না হলে ম্যাম হচ্ছে উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি, ইয়াং সিঙ্গারদের সাথে খুব বেশি গান গেয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। ইভেন সেই গান কিন্তু আমার নিজের সুর করা। আমার একটা ছোট ভাই সবুজ চ্যানেলের জন্য গানটি লিখে যখন আমার কাছে পাঠায় গীতিকার। এরপর সুর করলাম। তখন এই গানটি করার জন্য সাবিনা ইয়াসমিন আপার নামটা চয়েস করা হয়েছিল কিন্তু সে অসুস্থতার কারণে সিঙ্গাপুর থাকার কারণে যখন আমার কাছে জিজ্ঞেস করল এখন কাকে নিয়ে গান করতে চাও তখন আমি রুনা লায়লা ম্যামের নাম বললাম। এক সময় আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করত তুমি কার সাথে গান করতে চাও তখন আমি ম্যামের নাম বলতাম অনেকেই হাসতো কিন্তু আল্লাহর রহমতে অবশেষে সত্যি হলো। গানটি ‘এই না বৃদ্ধাশ্রম’ শিরোনামে। যেখানে ম্যাম মায়ের ভূমিকায় গেয়েছেন আমি সন্তানের ভূমিকায় গেয়েছি। সত্যি গানটি যখন করতেছিলাম তখন আমি ভয়, আবেগেই কান্না করেছিলাম।
সারাদিন ডট নিউজ: বরবাদ সিনেমার কারণে নোবেলম্যানের সাথে আপনার গানের অভিজ্ঞতা হয়েছে? কেমন হলো?
খাইরুল ওয়াসী: নোবেলের সাথে আগেই আমার পরিচয় ছিল। ওইভাবে কাজ করা হয়নি। সে আমার সম্পর্কে জানত আমিও তার সম্পর্কে জানতাম। আমি যখন মহামায় গানটি সুর করে পাঠালাম, তখন ডেমো ভোকালটা আমি দিয়েছিলাম। এরপরে সর্বসম্মতিক্রমে নোবেল ম্যান গানটি গাইলো, অসাধারণ হলো। আমার যেটা মনে হয় নোবেলম্যানদের জন্য এটি ওয়েলকাম ব্যাক। দারুণ ভাবে তিনি ফিরে এসেছেন, এভাবেই থাকবেন আশা করছি।
সারাদিন ডট নিউজ: পড়েছেন ঢাকা কলেজের ইংরেজিতে, ক্যারিয়ার গড়েছেন সংগীতে! বিষয়টি কিভাবে কি হলো?
খাইরুল ওয়াসী: ঢাকা কলেজে পড়া অবস্থায় সত্যি বলতে কি আমাকে এই ক্যাম্পাস বিশেষ পুরস্কার দিয়েছিল। তখন প্রিন্সিপাল ছিল ড. আয়েশা বেগম ম্যাম। ম্যাডাম আমাকে সরাসরি বলেছেন ‘তুমি কখনো চাকরি করো না’। আমার মাকেও ম্যাম বলেছেন। এই ঢাকা কলেজ ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে ব্রিটিশরাও লেখাপড়া করেছেন। ম্যাম, ঢাকা কলেজের ইতিহাস আমাকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে। ঢাকা কলেজের আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসের থিম সং আমি করেছিলাম। সুর করেছিলাম। তখন আরো অনেক শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় দারুণ ভাবে গানটি কম্পোজিশন করা হলো। সেই থিম সং যখন করি ওইখান থেকেই সবাই আমাকে বলতো ডক্টর আয়েশা ম্যাম ও শিক্ষকসহ অনেকেই বলতো তুমি সংগীতেই থেকো। তখন ছায়া নোটে আমি। ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হই। সব সময় নিজের কাছেও মনে হতো সংগীতে আমি কিছু করতে পারবো। এ কারণেই ইংরেজিতে পড়াশোনা করেও সংগীতকে নিয়ে আঁকড়ে আছি।
সারাদিন ডট নিউজ: আপনার দর্শক শ্রোতা সহ অনেকেই জানতে চায় ওয়াসী বিয়ে করবে কবে? কি বলবেন?
খাইরুল ওয়াসী: অবশ্যই অডিয়েন্সে, শ্রোতারা তো আমাদেরই অংশ। তাদের থেকে আলাদা হয়ে আমরা চলতে পারব না। বিয়ে হচ্ছে একটি রহমত। আমাদের পারিবারিকভাবে কথা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ সবাই দোয়া করবেন খুব শিগ্রই আপনাদের সুখবর দিতে পারব। দোয়া করবেন আমার সহধর্মিণীর জন্য, সে যেন আমাকে বুঝেন। খুব শিগ্রই আপনাদের নিয়েই সেলিব্রেশন করব।
সারাদিন ডট নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ
খায়রুল ওয়াসী: সারাদিন ডট নিউজসহ সকল শ্রোতাদের ধন্যবাদ।