দেশে প্রথমবার জিকা ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণ, আক্রান্ত ৫
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসের গুচ্ছ (ক্লাস্টার) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। রাজধানীর একটি এলাকায় একই সময়ে পাঁচজনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। সোমবার (৩ মার্চ) সংস্থাটি তাদের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানায়।
আইসিডিডিআরবির ওয়েবসাইটে বলা হয়, ২০২৩ সালে সংগ্রহ করা নমুনা পর্যালোচনায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সমগ্র জিনোম সিকোয়েন্সিং ও তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাওয়া এই স্ট্রেইন এশিয়ান লাইনেজের অন্তর্গত। এতে আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি থাকে। এর আগে ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া ও চীনে এই স্ট্রেইন দেখা গিয়েছিল।


বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এডিস মশার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, যা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়াতে সহায়ক। জিকা ভাইরাসও এডিস মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। ডেঙ্গুর মতোই জিকারও লক্ষণ খুব কমই প্রকাশ পায়—আক্রান্তদের ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই তা ধরা পড়ে না। তবে ভাইরাসটি দীর্ঘদিন শরীরে সক্রিয় থাকতে পারে এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
আইসিডিডিআরবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ঢাকার রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে জ্বর নিয়ে আসা ১৫২ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনের শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এই পাঁচজন রোগী এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করতেন এবং তাদের কারও দুই বছরের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই। এ ছাড়া তাদের মধ্যে একজন ডেঙ্গু ভাইরাসেও আক্রান্ত ছিলেন।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি সামনে আসে। আইইডিসিআর পরিচালিত এক গবেষণায় জানা যায়, ২০১৪ সালের নমুনা থেকে প্রথম সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়। তখন ধারণা করা হয়েছিল, ২০১৫ সালে ব্রাজিলে প্রাদুর্ভাবের আগেই বাংলাদেশে গোপনে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।
১৯৪৭ সালে উগান্ডায় বানরের শরীরে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। মানবদেহে প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৫২ সালে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মশাবাহিত এই ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের শিশুদের শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি থাকে।