‘ধমকের কারণে কোনো কাজ করার প্রয়োজন নেই, কারো ধমক শুনবেন না’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫

জেলা প্রশাসকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে কারো রক্তচক্ষু বা ধমকের কারণে কোনো কাজ করার প্রয়োজন নেই। কারো ধমক শুনবেন না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারকে একটা টিম হতে হবে। সরকার চালাতে টিম ওয়ার্ক লাগে। টিম গঠনের জন্য সবাই একত্র হয়, তখন কার কী করণীয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা থাকে। কার কী ঘাটতি রয়েছে, সেসব বিষয় থাকে। কারণ খেলা হলো সামগ্রিক একটা জিনিস। একজনের ভুল কাজে পুরো টিম তার সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমরা এমন ভুল যেন না করি, যাতে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়। এগুলো নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে ৩ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিজের মতো করে যেটা আইন, যেটা দেশের জন্য করা দরকার, সেটা করতে হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইন করে দিয়েছি, কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছায়নি। অথচ আমরা এখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি। এই যে দূরত্ব এটা যেন না থাকে। বিনা কারণে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। হয়রানি করাটাই যেন আমাদের ধর্ম। সরকার মানেই মানুষকে হয়রানি করা, এটাকে উল্টে দিতে হবে। সরকার ভিন্ন জিনিস। আপনার অধিকার পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাজ।

দায় নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা হলাম সরকার। তাই দায় এড়ালে হবে না। নারী ও শিশুদের রক্ষা বিশেষ দায়িত্ব। সংখ্যালঘুদের রক্ষা মস্তবড় দায়িত্ব। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ওপর সারা দুনিয়া নজর রাখে। সরকারের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা। সামনে আমাদের যেসব কর্মসূচি নেব, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার কথা মাথায় থাকবে।’
 
ডিসিদেরকে প্রতিযোগিতার পরামর্শ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এরপর বলেন, একটা প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থাকতে পারে। আমার জেলার বাজারদর সবচেয়ে ভালো। আমার জেরার শান্তিশৃঙ্খলা সবচেয়ে ভালো। আমার জেলায় কোনো চাঁদাবাজি নেই। খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতায় আমি ওপরে আছি। এমন চেষ্টায় যেন পিছিয়ে না পড়ি। র‌্যাংকিং থাকলে নিজেদের মধ্যে আনন্দ হয়। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব আসুক।

Nagad

তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটাই সুযোগ নিজেকে প্রকাশ করার, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার। গৎবাঁধা কাজ থাকবে, তবে সৃজনশীলতাও থাকতে হবে।
 
জন্ম সনদ নিয়ে ভোগান্তি কমানোর নির্দেশ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘যেকোনো সময় প্রতিটি নাগরিককে জন্ম সনদ প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ডিসিদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে জন্ম সনদ প্রদানের ভোগান্তি কমাতে হবে। একইভাবে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রেও ভোগান্তি কমাতে আন্তরিক হতে হবে। পাসপোর্ট করতে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না, এটা সবার নাগরিক অধিকার।
 
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, কীভাবে কোন জেলায় শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায়, এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)।