নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৬:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৫

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তার স্বাগত জানান তার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মাকে বিমানবন্দর থেকে বের করার পর, তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।

বিএনপির মিডিয়া সেলের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি কালো গাড়িতে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাচ্ছেন তারেক রহমান। গাড়িটি নিজেই চালাচ্ছেন তিনি।

জানা যায়, খালেদা জিয়াকে পশ্চিম লন্ডনের ‘লন্ডন ক্লিনিক’-এ ভর্তি করা হবে, যেখানে তার চিকিৎসা চলবে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর সাক্ষাৎ হয়, যার কারণে বিমানবন্দর এলাকায় আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হয়। তাদের সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা এবং স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিমানবন্দর এলাকা।

এটি ছিল প্রায় সাত বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ। তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির বিভিন্ন সদস্য, বিশেষ করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দল, যা লন্ডনে তার চিকিৎসা পরিচালনা করবে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার তাতে সায় দেয়নি। ফলে দেশেই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় চিকিৎসা চলছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর চিকিৎসা নিতে তার বিদেশ যাওয়ার পথ সুগম হয়।

উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

Nagad

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডাক্তার জুবাইদা রহমান ও তাদের মেয়ে জাইমা রহমান। আর ২০১৭ সাল থেকে লন্ডনে আছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান।

১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া দলে প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ১৯৮৪ সালে ১২ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও একই বছরে ১ মে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে ‘স্বৈরাচারের সঙ্গে কোনো আপস নয়’ এই নীতিতে অটুট থেকে ৯ বছর এরশাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। এরশাদের অধীনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে যাননি তিনি। ওই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচন করে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় আসে। বেশিদিন টিকতে পারেননি তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। পরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০০১ সালের আবারও ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দলটি। ২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। এর প্রভাবে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন ১১/১ সরকার আবির্ভাব ঘটে। দুর্নীতির দায়ে সপরিবারে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হয়। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান । দুই ছেলেকে বিদেশে চলে যেতে হয়। বড় ছেলে তারেক রহমান এখনও দেশে ফিরতে পারেননি। আরেক ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশের মাটিতেই মারা গেছেন।