অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র জমা দিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

রোববার (১ ডিসেম্বর) কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি তুলে দেন। সোমবার এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে ড. ইউনূস বলেন, “এই শ্বেতপত্র একটি ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিক খাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা আতঙ্কজনক হলেও এ নিয়ে সঠিকভাবে আলোচনা হয়নি।”

জানা গেছে, প্রতিবেদনে বিগত ১৫ বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, উন্নয়ন প্রকল্পে প্রশ্নবিদ্ধ অর্থ ব্যয়, বিদেশি ঋণের অর্থ ব্যবহার, আর্থিক তথ্যে গরমিল, ব্যাংক খাতের লুটপাট, জিডিপি-মূল্যস্ফীতির তথ্যে নয়-ছয় তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নে অস্বচ্ছতা ও রাজস্ব আহরণে পদক্ষেপের বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এছাড়া সংকট থেকে উত্তরণের পদক্ষেপও সুপারিশ করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির বাকি ১১ সদস্য হলেন— বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো কাজী ইকবাল,বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।

‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রয়েছে। কমিটি পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে সেই মাসের ২৮ তারিখ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।