ঢাকা কলেজ: আমার স্মৃতিমাখা ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ারের সূতিকাগার
ঢাকা কলেজের নাম শুনলেই মনের কোণে ভেসে ওঠে একগুচ্ছ স্মৃতি, যা আমার জীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে লেখাপড়া নিয়ে পথচলা কখনো সহজ ছিল না। তবে মা-বাবার অবিরাম চেষ্টায় মোংলা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার সুযোগ ঘটে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজে। নানা ভাই -ওসমান ব্যাপারীর সহযোগিতায় ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হই।
ঢাকা কলেজের মূল ফটকে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সক্রেটিসের বিখ্যাত উক্তি, “নিজেকে জানো”। এই মূলমন্ত্র ধারণ করেই কলেজটি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ১৮৪ বছর ধরে। কলেজটির ক্যাম্পাস, তখন সাতটি হল, এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতা, বন্ধুদের সহযোগিতা আমাকে নতুন জগতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। সাউথ হলে থাকার ব্যবস্থা হয়, যেখানে নতুন জীবনের শুরু। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে পার্টটাইম চাকরির মাধ্যমে নিজের পড়াশোনার খরচ বহন করা শুরু করি।



ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি
কলেজের প্রতিটি প্রাঙ্গণে যেন লুকিয়ে আছে গল্প। সবুজে ছায়া ক্যাম্পাস, দুপুরের খাবারের ডালের স্বাদ, গণরুমের থাকার অভিজ্ঞতা, নর্থ-সাউথ হলের প্রতিযোগিতা কিংবা পুকুর পাড়ের আড্ডা—সবই আজও স্মৃতিতে অম্লান। ক্যান্টিনে কুদ্দুস মামার পরিবেশিত খাবার এবং বন্ধুদের সাথে একসাথে খাওয়ার সময়গুলো ছিল আনন্দময়। সেই সঙ্গে বিভাগের শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টা আমাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এগিয়ে যেতে সাহ্যায্য করেছে। আল্লাহ সোবহান ওয়া তায়ালা ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এরপর লেখাপড়ার পাশাপাশি, সিনিয়রদের সাথে যোগাযোগ, নিজেকে স্কিল করার সুযোগসহ যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; তাদের সহচার্যে আজও নিজের পথচলা চলছে। থেমে যাইনি।
ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য ও অবদান
ঢাকা কলেজ শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এর অসামান্য অবদান রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কার্জন হল এবং শিক্ষক-ছাত্র সরবরাহ করে এই প্রতিষ্ঠান ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। বর্তমানে ঢাকা কলেজে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। উচ্চমাধ্যমিক থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত ১৯টি বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা কলেজ আজ ১৮৪ বছরে পা দিয়েছে। এর দীর্ঘ পথচলায় যেসব ঐতিহ্য, শিক্ষা এবং স্মৃতি সঞ্চিত হয়েছে, তা আমার মতো অসংখ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীর জীবনের অমূল্য অংশ। প্রিয় ঢাকা কলেজ, যুগ যুগ ধরে শিক্ষার আলো ছড়াবে—এই প্রত্যাশায়। তোমার গৌরবের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব। শুভ কামনা
শাহজালাল রোহান, সাংবাদিক, সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা। ২০১১-২০১২ মাস্টার্স।