শুভ জন্মদিন দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা
কারও কাছে বিদ্রোহী, কারও কাছে ফুটবলের ঈশ্বর হিসেবে পরিচিত তিনি। তবে তাকে যেভাবে ডাকা হোক না কেন, তিনি দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। যিনি বিশ্বকে প্রথম দেখিয়েছিলেন, একাই জেতানো যায় বিশ্বকাপ। যার বাম পায়ে প্রথম আটকেছিল ফুটবলপ্রেমীদের চোখ। আজকের আর্জেন্টিনার বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তার মূল কারিগর ম্যারাডোনা।
১৯৬০ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। দক্ষিণ প্রান্তের শহর ভিয়া ফিওরিতোতে তার বেড়ে ওঠা। তিন কন্যা সন্তানের পর তিনিই ছিলেন মা-বাবার প্রথম পুত্র সন্তান। তার ছোট দুই ভাই হুগো এবং রাউলও পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়।


ম্যারাডোনার বয়স যখন দুই, ততদিনে ব্রাজিলের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে, তবে কেবল একটি বিশ্বকাপ জিতেই পেলের সঙ্গে এক কাতারে চলে আসা মানুষটা ম্যারাডোনা।
তাকে ডাকা হয় ফুটবল ঈশ্বর নামে। নশ্বর পৃথিবীতে দিয়াগো ম্যারাডোনা যেন হয়ে উঠেছিলেন অবিনশ্বর। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার বিখ্যাত সেই হ্যান্ড অব গড গোল নিয়ে যত আলোচনা হয়, তারচেয়ে বেশি আলোচনার দাবি রাখে একই ম্যাচে ছয় জনকে কাটিয়ে দেওয়া অবিস্মরণীয় গোলটি। ইতালির ক্লাব নাপোলির আকাশি জার্সিকেই কিংবদন্তি বানিয়ে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। তাকে দুহাত ভরে ভালোবাসাও দিয়েছে নেপলসের মানুষজন। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি মরে গেলে আবার জন্ম নিতে চাই। ফুটবলার দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা হয়ে জন্মাতে চাই। এক জীবনে যা ভালোবাসা পেয়েছি, ভোলার নয়।’
ম্যারাডোনা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর। তার মৃত্যুতে মুহূর্তের জন্য থমকে যায় ফুটবল। তার মৃত্যুতে যেন সেদিন থেমে যায় গেছে রেফারির হুইসেল, আটকে যায় গোলরক্ষকের দস্তানা, নিশ্চল হয় ফুটবলের চলাচল।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে তার অসাধারণ নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। সেই আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ‘হ্যান্ড অব গড গোল’ এবং শতাব্দীর সেরা গোলটি। এরপর ১৯৯০ বিশ্বকাপেও দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। এ আসরে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন এই ফুটবল কিংবদন্তি। ফলে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি ম্যারাডোনাকে। ১৯৭৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর ক্লাব ও জাতীয় দল মিলে আর্জেন্টাইন মহাতারকা ক্যারিয়ারে মোট গোল করেছেন ৩৪৬টি।
ক্যারিয়ারে কোচিংও করিয়েছেন ম্যারাডোনা। ২০০৮ সালে ছিলেন মেসিদের কোচ। সেবার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করে ২০১০ বিশ্বকাপের টিকিট। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেয় ম্যারাডোনার দল।
হাসি-আনন্দে ব্যস্ত থাকা এই কিংবদন্তি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মাত্র ৬০ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
বল পায়ে দক্ষ নিয়ন্ত্রণ, চিতার বেগে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়াসহ তার ঐতিহাসিক গোল ভ্ক্তদের হৃদয়ে তাকে বাঁচিয়ে সহস্র বছর। ভক্তদের হৃদয়ে অমরত্ব পেয়ে বসা সোনালি বালক ম্যারাডোনাকে ৬৩তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন বাঁ পায়ের প্রথম জাদুকর।