স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্রান্স সহযোগিতা করবে: ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্রান্স সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
তিনি বলেন, ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার পরিচয় দিয়েছে। এর জন্য আমি বাংলাদেশের প্রতি ধন্যবাদ জানাই। আগামী বছরগুলোতে ফ্রান্স বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নেতৃস্থানীয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সঙ্গে আলোচনা সার্বিক বিষয়ে ফলপ্রসূ হয়েছে।’

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত ফ্রান্স প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার পাঁচ দশকের অধিক সময় চলমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দিন। আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন, আজ তা একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সঙ্গে আলোচনা সার্বিক বিষয়ে ফলপ্রসূ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে।’

‘বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার এই নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে’ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা উভয়েই আশাবাদী। বিগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা উন্নয়ন এবং সুশাসন এই নতুন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিমূলক কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।’

Nagad

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় ও ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় ফ্রান্স সরকারের আস্থার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এজন্য আমি রাষ্ট্রপতি মাখোঁর নেতৃত্বে ফ্রান্স সরকার ও ফ্রান্সের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়োছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মাখোঁর এই সফরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা কিছু সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ফ্রান্স আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তা প্রদানে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নেতৃস্থানীয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ফ্রান্সের অগ্রণী ভূমিকাকে আমরা স্বাগত জানাই এবং এ লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর নেতৃত্বে একটি টেকসই তহবিল গঠনে ফ্রান্সের আহ্বানকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি।’

এছাড়াও ফ্রান্সের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাষা বিনিময়ের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে, রোববার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রাত ৮টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় বিমানবন্দরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল সেখানে ম্যাক্রোঁকে গার্ড অব অনার এবং লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়।