‘আমি এখন কী করব, কোথায় যাব, কী খাব?’: জল্লাদ শাহজাহান
প্রায় দীর্ঘ ৩২ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। দেশের বিভিন্ন কারাগারে ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন এই জল্লাদ। বহুল আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া এদিন কারাগার থেকে বেরিয়ে অঝোরে কেঁদে কেঁদে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি এখন কী করব, কোথায় যাব, কী খাব?’ আমার ঘর-বাড়ি নেই। কারাগারে এক আসামি ছিলেন, যার বাসা রাজধানীর বসুন্ধরায়। আপাতত সেখানেই থাকব।
রোববার (১৮জুন) বেলা ১১টা ৪৬ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান। তখণ গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন জল্লাদ শাহজাহান।


এ সময় অঝোরে কেঁদে কেঁদে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে যেনো বাড়িঘর ও একটি কর্মসংস্থান করে দেন।’
অবিবাহিত শাহজাহান নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের বাসিন্দা। মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা মামলায় ছয় আসামিসহ ২৬ জনকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছেন তিনি।
সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, জল্লাদ শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, চারজন যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলাভাইসহ দুজন জেএমবি সদস্য এবং আরও ১৪ জন অন্য আলোচিত মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।
তিনি জানান, শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানার ১০ হাজার টাকা কারা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করেছে।
জানা যায়, ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় শাহজাহানের ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছরের সাজা মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে এসে নামে। দুটি মামলায় পাঁচ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৩২ বছর পর ১৮ জুন মুক্ত আকাশে শ্বাস ফেলার সুযোগ পাবেন জল্লাদ শাহজাহান।
সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। এরপর কারাগারে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় আসলেই ডাক পড়তো তার। টানা আট বছর এই কাজ করার পর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন।এদিকে, সকাল থেকেই শাহজাহানের মুক্তির খবর সংগ্রহের অপেক্ষায় জেল গেটের ভিতরে অবস্থান করছিল সাংবাদিকরা। এ সংবাদ লেখার সময় সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জল্লাদ শাহজাহানের কোনো স্বজনদের দেখা পাওয়া যায়নি।