সাংবাদিক নাদিমকে ‘উচিৎ শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন চেয়ারম্যান বাবু: র্যাব
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুর পরিকল্পনায় সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন-জানান, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি নাদিমকে ‘উচিৎ শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন জেলার বকশীগঞ্জ উপেজলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। তার নেতৃত্বে মারধরের কারণে নাদিম চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান।


তিনি বলেন, র্যাবের অভিযানে মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু (৫০), মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল (৩৫), জাকিরুল ইসলাম (৩১) ও মো. রেজাউল করিম (২৬) নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার আসামি।
আজ শনিবার (১৭জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত অবস্থিত র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা জানান। তার আগে আজ সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার কর হয়।
র্যাব জানায়, গত ১৪ জুন রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে সাংবাদিক নাদিম বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় পৌঁছালে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ১৫ জুন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাদিম মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় নাদিমের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সাংবাদিক নাদিম সাম্প্রতিক সময়ে বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন।
তিনি বলেন, মামলাটি যখন খারিজ হয়ে যায়, তখন নাদিম তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এতে বাবু আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। মামলা খারিজের ঘটনাটি ছিল ১৪ জুন। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে বাবু তার যে সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে তাদের মাধ্যমে সাংবাদিক নাদিমকে একটি উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা নেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় তার সন্ত্রাসী গ্রুপ অবস্থান করছিল, ১৪ জুন রাতের বেলা। মূল পরিকল্পনাকারী বাবু সন্নিকটে অবস্থান করে নির্দেশ দিচ্ছিলেন।’
খন্দকার মঈন বলেন, ‘আনুমানিক রাত ১০টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিকসহ নাদিম যখন বাসায় যাচ্ছিলেন তখন রেজাউল দৌড়ে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন, চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে। তখন বাবু সন্ত্রাসী গ্রপের অন্যরা দৌড়ে যায় এবং জাকির, মনিরসহ তারা সাংবাদিক নাদিমকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। তার (নাদিম) এক সহযোগী সাংবাদিককেও তারা মারধর করে। পরে সাংবাদিক নাদিমের চিৎকারে এলাকাবাসী ও অন্যান্য সাংবাদিক তাকে বাঁচাতে আসে এবং ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় সাংবাদিক নাদিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরের দিন বিকেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।’