সরকারের উদ্যোগের ফলে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো গেছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-বলেছেন, সরকারের উদ্যোগের ফলে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো গেছে। সরকারের কার্যক্রমগুলোর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং দরিদ্র্য মানুষ এতে উপকৃত হচ্ছে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও সরকার দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
আজ বুধবার (৩১মে) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে পর্বে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের করা প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব, মূল্যস্ফীতি ও অস্থিরতা দেখা দেয়, এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা মোকাবিলা করে আমাদের সরকার দেশের অর্থনীতিকে দ্রুত করোনাপূর্ব উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তীব্র করোনা সংকটের মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা ওই সময়ের জন্য সারা বিশ্বের মধ্যে ছিল অন্যতম সর্বোচ্চ।
তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এ সময় অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সরকারি ব্যয় যৌক্তিকীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রদান, রপ্তানি প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি, মুদ্রানীতি ইত্যাদি।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে সেপ্টেম্বর ২০২৩ এবং সব কাজ সম্পন্ন করে জুন-২০২৪ এ ভাঙ্গা হতে যশোর অংশের রেল চলাচল চালু করা সম্ভব হবে।
সংরক্ষিত আসনের খ. মমতা লাভলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শোক
সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, সাবেক সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মা রহিমা ওয়াদুদ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়।
এর আগে নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বেগম মতিয়া চৌধুরী, জি এম কাদের, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান নূর, হাবিব হাসান প্রমুখ।
শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে স্মরণ করে বলেন, ফারুক ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছাত্রজীবনে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। নিষ্ঠা ও সাহসের সাথে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অবদান রেখেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে, আমরা একে একে সব মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে ফেলছি।
গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি এভাবে চলে যাবেন তা কখনো ভাবিনি। আল্লাহ তার পরিবারকে এই শোক সইবার ক্ষমতা দিক।
প্রধানমন্ত্রীর দাদি সায়েরা খাতুন ১৯৭৪ সালের ৩১ মে মৃত্যুবরণ করেছিলেন উল্লেখ করে এ দিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ দিনে তিনি সবার কাছে তার জন্য দোয়া কামনা করেন। পরে আকবর হোসেন পাঠানসহ মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করে মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী। পরে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়।