বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে: পলক

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৪:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৩

বিশেষভাবে সক্ষমদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ছবি: তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের উদ্যোগে এবং সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটির সহযোগিতায় দিনব্যাপী আয়োজিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা ২০২৩ আজ উদ্বোধন করলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে অনুষ্ঠিত এই মেলায় সকাল থেকেই অংশ নেয় ৫৪টি আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান । প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিগত ৮ বছর থেকে এ চাকরি মেলর আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।

প্রধান অতিথি বক্তৃতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ বলেছেন, সক্ষম, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও বিশেষভাবে সক্ষমদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে শিক্ষিত প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের চাকরির সুব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলা” চাকরি দাতা ও চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করবে। শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আত্মনিশীল হতে পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।

তিনি আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্পে একজন উদ্ভাবক টকিং হোয়াইট স্টিক আবিষ্কার করেছেন উল্লেখ করে বলেন, এই সাদা ছড়ি দিয়ে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে স্পর্শ বা ধাক্কা খাওয়ার আগেই টকিং হোয়াইট স্টিক কথা বলে সতর্ক করে দেয়। তিনি এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসেসটিব টেকনোলজি উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটি বিভাগ থেকে হুইল চেয়ার দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্বাচ্ছন্দে চলতে দেশে স্বল্প খরচে উচ্চ প্রযুক্তি সম্বলিত হুইলচেয়ার তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে।

Nagad

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রকে বৈষম্যমুক্ত ও মানবিক করতে হলে সকল সুযোগ সুবিধা সকলের জন্য সমন্বিতভাবে ভাবে কাজে লাগাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোন প্রতিবন্ধী ভাই বোন যেন কোন নাগরিক সুবিধা হতে বিন্দুমাত্র বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব।

পলক বলেন, আইসিটি বিভাগের স্টাটআপ প্রকল্প, স্টাটআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের পুঁজি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি আগামী বছর থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলার পাশাপাশি উদ্যোক্তা সম্মেলন করার ঘোষণা দেন।

প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী বা বিশেষভাবে সক্ষম ভাই-বোনদের মধ্যে যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা সীডমানি হিসেবে পুঁজি প্রদানের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাইবোনেরা জব সিকার না হয়ে জব ক্রিয়েটর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন।
পরে তিনি মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, সরকারি হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের সংখ্যা অনেক যা ৩০ লক্ষেরও অধিক। তাই বাংলাদেশ সরকার এই বিপুল সংখ্যক ব্যাক্তিদের নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে এবং তাদের জন্যে প্রকল্প, প্রতিযোগিতা, চাকরি মেলা সহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে তাদেরকে সামনে নিয়ে আসার জন্যে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন যে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। পূর্বে না থাকলেও বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, আমাদের প্রতিটি সন্তান যারা এই মেলায় এসেছেন তাদের চাকুরি প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিগণ অনিশ্চিতভাবে না ঘুরে তাদের জন্য সুযোগ প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। সবশেষে তিনি বলেন যে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা প্রতিটি প্রতিবন্ধী মানুষ স্মার্ট হতে চাই।

বিসিসি এর নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার বলেন, সমাজের কল্যাণে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকে একত্রিত হয়ে সমাজকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে তিনি আহ্বান জানান।

উক্ত মেলায় সারাদেশ থেকে প্রায় ৪৫০ জন চাকরি প্রার্থী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এর মহাপরিচালক সচিব শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান এবং সিএসআইডি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ,প্রতিবন্ধীদের চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানে সমূহের পক্ষে বক্ত্যব রাখেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, মাই আউটসোর্সিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিবুল বাশার।

উল্লেখ্য যে, ২০১১ সাল থেকে বিসিসির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিনামূল্যে আইসিটি প্রশিক্ষণ চালু করা হয়। এরই আলোকে আইসিটি প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ২০১৫ সাল থেকে চাকরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। বিগত চাকরি মেলাগুলোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চাকুরী প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা হচ্ছে: ২০১৫ সালে ৩২, ২০১৬ সালে ৬০, ২০১৭ সালে ১১৫, ২০১৮ সালে ১৭৬, ২০১৯ সালে ৮৬, ২০২০ সালে ৮০, ২০২১ সালে ১২৮ এবং ২০২২ সালে ২০২ অর্থাৎ গত ৮ টি চাকরি মেলাতে মোট ৮৭৯ জন। একইসাথে চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল: ২০১৫ সালে ৫টি, ২০১৬ সালে ৭টি, ২০১৭ সালে ১২টি, ২০১৮ সালে ১৫টি, ২০১৯ সালে ২৩টি, ২০২০ সালে ৩২টি, ২০২১ সালে ৪০টি এবং ২০২২ সালে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান।

বিভিন্ন ট্রেডবডি বা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উক্ত মেলায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেসিস, ই-ক্যাব, বাক্কো, আইএসপিএবি, বিসিএস, কোয়াব ছাড়াও আইসিটি শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও ব্যুরোর তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধিতা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠান।